ঠিক দুপুর বারোটায় লাল নীল রঙিন পোশাকের রাজপ্রহরীদের ছন্দ বদ্ধ চলার ছন্দে কোপেনহেগেন শহর ও তার Amalienborg প্রাসাদ চত্বর বেশ সরগরম হয়ে ওঠে। বিশাল প্রাসাদ চত্বর ঘিরে প্রচুর টুরিস্ট ডেনমার্কের রাজকীয় সেনাদের কুচকাওয়াজ সহযোগে প্রহরী বদলের অনুষ্ঠান দেখতে জমায়েত হয়। অবশ্য কোপেনহেগেন বাসীর কাছে নিত্য দিনের এই অনুষ্ঠান খুব একটা নজর কাড়ে না, কুচকাওয়াজ চলাকালীন স্থানীয় অনেকেই সাইকেল নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় – এই প্রাসাদের প্রহরী বদলের আসল দর্শক তো বাইরের মানুষ!
ডেনমার্কের রাজপরিবারের শীতকালীন বাসস্থান ছিল এই Amalienborg প্রাসাদ। অষ্টভুজ আকারের বিশাল প্রাসাদ চত্বরের চারদিকের চারটে একই রকম স্থাপত্যের উপস্থিতি এই প্রাসাদকে ইউরোপের মধ্যে ব্যতিক্রমী করেছে, আর প্রাসাদ চত্বরের একদম মধ্যে আছে রাজা Frederick V এর স্ট্যাচু। ঐতিহাসিক সময় থেকে বিশাল চত্বরের চারদিকের এই চারটে প্রাসাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ পরিবার বাস করে গেছে, আর তাঁদের বসবাসের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে rococo স্টাইলে তৈরি প্রাসাদের অন্দরসজ্জায়, ব্যবহৃত আসবাব পত্রে।
ঠিক সন্ধ্যার আগে একবার এই চত্বরের প্রহরী বদল হয়, তবে দুপুরের মতো সমারোহ করে হয় না। কোপেনহেগেন এলে ডেনমার্কের রাজপরিবারের রাজকীয়তার আঁচ পেতে এই বিশাল চত্বরে অনেকেই পৌঁছে যায়। পাথরে বাঁধানো বিশাল চত্বরে ঘুরে ঘুরে ঐ স্থাপত্যের গায়ে গায়ে জড়িয়ে থাকা ডেনিশ রাজকীয়তার আভাস পেতে চেষ্টা করে।
অক্টোবরের হিম শীতল ধূসর সন্ধ্যা নামার আগে যখন পৌঁছলাম রাজ প্রাসাদের চত্বরে, সন্ধ্যার আগের প্রহরী বদল চলছে। কুচকাওয়াজ করতে করতে একদল প্রহরী চলেছে – পরনে ওদের রাজ প্রহরীর জমকালো লাল নীল পোশাক, মাথায় মোটা কালো লোমের টুপি। অবশ্য, এই মাইনাস ঠাণ্ডায় শীতল পাথুরে চত্বরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রাজ দরজা পাহারা দিতে হলে ঐ ধরণের জমকালো টুপি ও পোশাক না হলে অচিরেই নিউমোনিয়া হতে বাধ্য।
গুটিকয় উপস্থিত টুরিস্টের সঙ্গে আমরাও কুচকাওয়াজরত প্রহরীর সঙ্গে সঙ্গে চলতে চলতে ডেনিশ রাজ প্রতিপত্তির সাক্ষী হই। প্র্যতেক দেশেরই রাজ প্রহরীদের এক জমকালো পোশাক থাকে, আর সেই ঐতিহ্যপূর্ণ পোশাকই টুরিস্টদের আকর্ষণ করে – আর সেই জন্যেই হয়তো সময় এখন যতই আধুনিক হোক না কেন ওরা এখনো সেই পোশাকে পুরনো বন্দুক নিয়েই পাহারা দেয়।
রাজা নেই, নেই রাজ পরিবার কিন্তু তার উপস্থিতির চিহ্ন, রাজত্বের চিহ্ন আজও ছড়িয়ে আছে এই জায়গার প্রতিটি ইটে, এই জায়গার উদার বিশাল চত্বরে, এই জায়গার পরিবেশে আর সেই উপস্থিতির অনুরণন শুনতে আজও পৃথিবীর নানা কোণের মানুষ রাজ দরবারের আঙিনায় এসে জড়ো হয়।