পৃথিবীর কোন এক প্রান্ত – কোপেনহেগেন বন্দরের পাশের Langelinie পার্কের দক্ষিণের এক দিকে, অক্টোবরের ধূসর মেঘলা দিনে, এক হলুদ পাতা ঝরা গাছের পাশে, এক বিশাল ফোয়ারা – Gefion ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে সেদিন ঠিক কি ভেবেছিলাম, আজ সেটা একদম মনে নেই, কিন্তু সেই ছবি দেখে এক ঝটকায় যেন সেই দিনেই ফিরে যাই। অক্টোবরের দিনটি, সেদিন ছিল খুবই মেঘলা, বাতাস ছিল ভেজা, আর পরিবেশ ছিল হিম ঠাণ্ডা। ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে যে টুকু জলের ছিটে গায়ে লেগেছিল, মনে হচ্ছিল যেন বরফ কুচির ছিটে।
ফোয়ারার ঠিক উপরে দামাল, মত্ত, উগ্র পশুর দলকে তরোয়াল হাতে বশে আনার চেষ্টায় রত স্ক্যান্ডানেভিয়ার পুরাণের দেবী Gefion। পুরাণে কথিত – দেবী Gefion ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় দ্বীপ Zealand সৃষ্টি করেছিলেন, যেখানে আজকের এই কোপেনহেগেন শহর। Zealand দ্বীপ তৈরির সময়ে দেবী Gefion এর অসীম ক্ষমতা, শক্তি, শৌর্য এই স্ট্যাচুর খাঁজে খাঁজে প্রকাশ পেয়েছে।
কথা ছিল, ডেনিশ ভাস্কর Anders Bundgaard এর তৈরি দেবী Gefion এর স্ট্যাচুটি শহরের ভেতরে স্থাপিত হবে, কিন্তু অবশেষে এই বিশাল পার্কে এর স্থান হয়েছে।
এই ফোয়ারার স্বচ্ছ জলে চোখ রাখলে, ভেতরে দেখা যায় প্রচুর খুচরো পয়সা। ফোয়ারার দিকে পেছন করে চোখ বন্ধ করে মাথার পেছন দিকে খুচরো ফেললে নাকি ইচ্ছে পূর্ণ হয়। ইউরোপের অনেক জায়গার ফোয়ারাতে দেখেছি এমনি খুচরো ফেলার চল আছে। ইতালিতে ত্রিভেই ফোয়ারার সামনে তো জায়গাই পাওয়া যায় না দাঁড়ানোর – সবাই চায় চোখ বন্ধ করে ফোয়ারার দিকে পেছন করে জলে পয়সা ফেলতে। কি আশ্চর্য, পৃথিবীর সব দেশের মানুষের সরল বিশ্বাসের ধরণ গুলো কেমন যেন একই বলে মনে হয়।
ইউরোপের পথে চলতে চলতে যেখানেই গেছি, দেখেছি এক একমুঠো জীবনের ছবি, অপূর্ব প্রকৃতির ছবি, স্থাপত্য, শিল্প, ভাস্কর্যের ছবি – আর সেই ছবি এঁকে নিয়েছি চেতন ও অবচেতন মনের এক গহন গভীর বিশাল ক্যানভাসে। জীবনের চলার পথে কতো যে ছবি তৈরি হয়, কতো ছবি যে চলার পথে জীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। কখনো জীবনের কোন এক হলুদ নরম আলোর পড়ন্ত দুপুরে হঠাৎ কোন এক ধূসর বৃষ্টি ভেজা দিনের ছবি ভেসে ওঠে, আশ্চর্য হই – ভাবি সেদিন আমরা ছিলাম সেই ছবির প্রেক্ষাপটে?