প্রতিদিনই কতো যে ছোট ছোট না পাওয়ার বেদনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ঘিরে রাখে। প্রতিদিনই খবরের কাগজের প্রথম পাতায়, টিভি নিউজের হেডলাইনে শুধুই তো দেখি ধ্বংস, যুদ্ধ, মারামারি, হানাহানি, রক্ত খরচ, লুটে নেওয়া, হারিয়ে যাওয়া, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প – আর এই নিয়েই গড়ে ওঠে আমাদের দৈনন্দিন পাওয়া, না পাওয়ার এক পৃথিবী। এক নৈরাশ্যের পৃথিবী, আতঙ্কের পৃথিবী – যে পৃথিবী প্রতিদিন রসাতলের দিকেই যাচ্ছে।
আর সেই কারনেই যেন পৃথিবী থেকে আমাদের বিশ্বাস দিন দিন উবেই যাচ্ছে, বিশাল এই পৃথিবীর প্রতি কেমন এক বিশ্বাসহীনতায় আমরা আতঙ্কগ্রস্ত। প্রতিদিনই নানান সংবাদ মাধ্যমের তৈরি, অহেতুক, নেতিবাচক, আরোপিত জ্ঞ্যানে আমাদের চিন্তা ধারা এক ধূসর জালে আবদ্ধ। সকালে খবরের কাগজ পড়ে, সন্ধ্যার টিভির খবরে প্রচুর কারেন্ট নিউজ জেনেও কখনোই যেন ভাবতে পারি না – যে আমাদের পৃথিবী এক উন্নত, আশাবাদী, ভালো পরিণতির দিকে যাচ্ছে!
তাই, যখন TED Talk এ শিক্ষিত, সংবেদনশীল, চিন্তাশীল এক ঘর মানুষকে ও চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জীকে Hans Rosling, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু, নারী শিক্ষা, বিশ্ব দারিদ্র বিষয়ে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন – দেখা যায়, পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষ কখনোই আশবাদী উত্তর দেয় না, বরং শিম্পাঞ্জীরা পৃথিবীর সভ্যতা সম্বন্ধে কিছু না জেনেও, সন্ধ্যার খবর না জেনেও মানুষের চেয়ে বেশী আশাবাদী উত্তর দিয়েছে! এমনকি যারা প্রতিদিন খবরের কাগজে বা টিভি চ্যানেলে খবর সরবরাহ করে – সাংবাদিক, তারাও শিম্পাঞ্জীর বুদ্ধিমত্তার কাছে হেরে গেছে? ওরাও শিম্পাঞ্জীর চেয়ে বাজে উত্তর দিয়েছে!
তাহলে সমাধান কি? শিম্পাঞ্জীদের চেয়ে ভালো উত্তর দেওয়ার রহস্য কি? এতো জেনে, পড়াশোনা করে, শেষ পর্যন্ত শিম্পাঞ্জীদের কাছে মানুষকে হেরে যেতে হবে? সমাধান একটাই – পৃথিবীর প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, যুক্তি দিয়ে ভাবতে হবে, নিজেদের অনুমান শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে যাচাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে – পৃথিবী, তার মানুষ ও তাঁদের সভ্যতা উন্নত পরিণতির দিকেই যাচ্ছে।
প্রতিদিনের ছোট ছোট চিন্তায় ও কাজে সেই হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই শিম্পাঞ্জীর বুদ্ধিমত্তার কাছে মানুষকে আর হারতে হবে না। মানুষকে সঠিক যুক্তি, বুদ্ধি, সঠিক তথ্যের উপর নির্ভর করেই চলতে হবে – যা শুধুমাত্র মানুষেরই একাধিপত্য। মানুষকে ভালো থাকার, পরিস্থিতিকে ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার এক আশাবাদী বিশ্বাস, ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই বাঁচা উচিত।