ইউরোপের প্রতিটি শহর তার নিজস্ব অভিনব স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মনুমেন্ট, ইতিহাস নিয়ে এক চরিত্র তৈরি করে। আর শীতের ধূসর দিনে, যখন, ডেনমার্কের রাজধানী শহর কোপেনহেগেনও এক রহস্যময় ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে স্বাগত জানায়, এই শহরের অভিনবত্ব গুলোর দিকে চোখ চলে যায়।
শহরটির ঐতিহাসিক স্থাপত্যের গাম্ভীর্য ও ধূসর দিনের মেঘলা ক্যানভাস – সব মিলেমিশে, মনে হয়, যেন ইতিহাসের কোন এক থমকে যাওয়া সময়ে গিয়ে পা রেখেছিলাম।
অক্টোবরের ঠাণ্ডায়, হাতে গোনা টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিশে গিয়ে, ষ্টেশন ছাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে, সিটি হল স্কোয়ারের সামনে যখন পৌঁছলাম – সিটি হল বিল্ডিঙ ও ড্রাগন ফোয়ারার মুখোমুখি হলাম। অবশ্য দূর থেকেই ড্রাগন ফোয়ারার ড্রাগনটিকে চোখে পড়েছিল।
যদিও গ্রীক পুরাণে ড্রাগনের এক মস্ত ভূমিকা আছে। ড্রাগন শব্দটাই এসেছে গ্রীক পুরাণ থেকে। গ্রীক পুরাণ মতে, ড্রাগন মানে এক মস্ত সাপ, দৈত্যাকার সাপ।
আর ইউরোপিয়ান সংস্কৃতিতে যে ড্রাগনের কথা পাওয়া যায় – সেটা পাখা সহ, বড় গিরগিটির মতো দেখতে এক কিম্ভূত প্রাণী, যার সামনের পা গুলো পেছনের পায়ের তুলনায় বড়, আর প্রাণীটি মুখ দিয়ে আগুনের হল্কা ছাড়ে। ইউরোপিয়ান লোকগাঁথা ও পুরাণে এই ধরণের ড্রাগনের কথাই পাওয়া যায়।
কিন্তু, ইউরোপের ঐতিহ্যময় স্থাপত্যে সেই পৌরাণিক ড্রাগনের সরাসরি প্রভাব খুব একটা দেখা যায় না। ড্রাগন সাধারণত এশিয়ার স্থাপত্যে প্রচুর প্রভাব ফেলে।
তাই, কোপেনহেগেন শহরের সিটি হল স্কোয়ারের গাম্ভীর্যপূর্ণ স্থাপত্যের মাঝে, ড্রাগন ফোয়ারার উপস্থিতি অনেক মানুষকেই অবাক করে, করে কৌতূহলী। অবশ্য, এই জায়গায় এলে, ড্রাগন ফোয়ারাটি চোখে পড়তে বাধ্য। প্রথমে কোপেনহেগেন শহরের প্রধান কেন্দ্র Amagertorv এই ফোয়ারা স্থাপনের কথা ছিল, কিন্তু, পরবর্তী কালে সিটি হল স্কোয়ারের কেন্দ্রে এই ড্রাগন ফোয়ারাটি স্থান পায়।
গ্রীক পুরাণের প্রেরনায় তৈরি, প্রায় সাত মিটারের কাছাকাছি উচ্চতার এই ফোয়ারার কেন্দ্রে ড্রাগনটিকে এক মত্ত ষাঁড়ের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখা যায়। আর তাকে ঘিরে একটু নিচের দিকে আরও তিনটি ড্রাগন মুখ দিয়ে জল ওগরায়। ফোয়ারাটিকে ঘিরে আরও যা অলঙ্কার চোখে পড়ে সবই গ্রীক পুরাণ থেকেই উঠে এসেছে।
ঠাণ্ডা আরও জাঁকিয়ে নামে, বাতাস যেন জমাট বেঁধে তুষার কণার মতো ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হয়ে আসে। ড্রাগন ফোয়ারা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাই – অনেকটা দূর। কোপেনহেগেনের বড় রাস্তা হাতছানি দেয়। হাতছানি দেয়, এগিয়ে যাওয়ার নিয়তি। পেছনে পড়ে থাকে ড্রাগন ফোয়ারা, সিটি হল স্কোয়ার, এক টুকরো সময়। সামনের পথটা যে অনেক দীর্ঘ।