কোপেনহেগেন শহরের প্রধান পথ আমাদের যে স্কোয়ারে নিয়ে আসে, নাম – Amagertorv, কোপেনহেগেন শহরের একদম কেন্দ্রবিন্দু, তারও কেন্দ্রের মুখ্য আকর্ষণ এক ফোয়ারা – Stork Fountain। ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন স্কোয়ার গুলোর মধ্যে অন্যতম এই স্কোয়ার ও ফোয়ারা।
কোপেনহেগেনে যারাই আসে, এই স্কোয়ারের Stork Fountain এর কাছে তাঁদের একবার অন্তত আসতে হয় – এখানে এসে ম্যাপ দেখে ঠিক করে নেয় – এবার কোনদিকে যেতে হবে।
অবশ্য, শুধু যে টুরিস্টদেরই এখানে আসতে হয় তা নয় – বহুদিন ধরে কোপেনহেগেনবাসিদের জন্যে এই ফোয়ারা, একটু সময় কাটানো, একটু গল্প গুজব, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার এক প্রিয় জায়গা।
যদিও, ডেনিশ সামার খুবই অল্প দিনের, গরমের সময়ে ডেনিশরা এই ফোয়ারার নিচে, জলের রেণু মেখে, সময় কাটাতে খুবই পছন্দ করে। ষাটের দশকে যখন ইউরোপে হিপি কালচারের প্রচলন হয়েছিল – এই ফোয়ারার কাছে হিপিরা জমায়েত হতো। তাছাড়া, পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত কোপেনহেগেনের সদ্য উত্তীর্ণ মিডওয়াইফরা এই ফোয়ারাকে ঘিরে নাচত।
সাধারণত উত্তরের শীতের দেশের পরিযায়ী পাখিরা শীত এলে দক্ষিণের গরমের দেশে উড়ে যায় – দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে ওরা গরমের দেশে যায় ও শীতের দেশে যখন আবার গরম আসে, ওরা ফিরে আসে, তাদের নিজের বাসায়।
কিন্তু, কোপেনহেগেন শহরের কেন্দ্রের এই Stork Fountain এর তিনটে সারসের আর শীতের দেশ ছেড়ে গরমের দেশে যাওয়া হয় নি, না শীত এলেও না। হয়তো, ওরা উড়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু, শিল্পী Edvard Petersen ও ভাস্কর্য শিল্পী Vilhelm Bissen এর ব্রোঞ্জ মিলে তাদের ভঙ্গিমাকে ধরে রেখে দিয়েছিল। তাই ওরা এই শহরেই থেকে গিয়েছিল।
তাই, ১৮৯৪ থেকে, হোক না শীতের ধূসর, স্তব্ধ, হিমেল, বিষণ্ণ, বিকেল, সন্ধ্যা – এই ফোয়ারাকে ঘিরে তিনটে সারস, ডানা মেলে দিয়ে এক্ষুনি উড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে, উড়ে যাওয়ার আশ্বাসন নিয়ে আজও থমকে আছে।
উনিশ শতাব্দীতে, ডেনমার্কের রাজা Frederik VIII ও রানী Louise এর সিলভার বিবাহ বার্ষিকীতে কোপেনহেগেন সিটি কাউন্সিল এই সারস ফোয়ারা ওদেরকে উপহার দিয়েছিল। ওদের সিলভার বার্ষিকী উপলক্ষে শহরকে সাজানোর জন্যে, নানা জায়গায় ফোয়ারা স্থাপন করা হয়েছিল। আর এই ফোয়ারা এক শিল্প প্রতিযোগিতার মাধ্যেমে নির্বাচিত হয়েছিল।
পাথর ও ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি, তিন স্তরের এই ফোয়ারার জল উপর থেকে নিচের দিকে, সারসের কাছে নেমে আসে। তারপর, আরও নিচে ব্রোঞ্জের তৈরি ব্যাঙের গা বেয়ে ফোয়ারার জল গড়িয়ে নামে। শীতের দিনেও খুব কাছে গেলে, হিম শীতল জলের ছিটে এসে গায়ে লাগে। এই শহরের স্থানীয় জীবন যাপনে যখন এই সারস ফোয়ারার উপস্থিতির এক ভূমিকা থাকে, এই সারস ফোয়ারাকে কোপেনহেগেন শহরের এক প্রতীক বলা যায়। এই ফোয়ারাকে দেখে নিয়ে, যে দিকে রাস্তা গেছে বেঁকে – সেইদিকে এগিয়ে যেতে হয়।