July 2013, Finland
সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে এখন নরম রোদ উঠেছে। সদ্য স্নান সেরে আরও বেশী ঝকঝকে হয়ে উঠেছে হেলসিঙ্কি। আজ সেনেট স্কোয়ারে প্যারেড হচ্ছে। লোকে লোকারণ্য। কাল উইক এন্ড, তাই লোক যেন উপছে পড়েছে হেলসিঙ্কিতে।
জলদেবীর (Havis Amanda) মূর্তির সামনে বসে জনারণ্য দেখছি। দেখছি মানুষের জীবনযাত্রার ছোট ছোট মুহূর্ত। আকাশ আরও নীল হয়েছে। হেলসিঙ্কি ক্যাথিড্রালের সবুজ চূড়া নীল আকাশের পট ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরেছে। উৎসবের সাজে সেজেছে শহর ও মানুষ।
জুলাইয়ের এই সময়ে এখানে নানান রকমের ছোটখাটো ফেস্টিভ্যাল হয়। ট্যাঙ্গো নাচ, জ্যাজ মিউজিক ভরিয়ে রাখে শহরের পরিবেশ। গান বাজনার সুরে গমগম করে পার্ক, ষ্টেশন চত্তর।
এখানে প্রচুর কফি শপ। ফিনিসরা প্রচুর কফি খেতে ভালোবাসে। সাধারণত এক এক জন ফিনিস প্রতি বছরে দশ কিলো গুড়ো কফি খায়। কফির সঙ্গে খায় গরম গরম (Cinnamon) দারুচিনি বান। এক চুমুক কফির সঙ্গে এক কামড় বান- এটাই ফিনিস কফি-ডেলিকেসি।
শহরের বড় রাস্তা ধরে হাঁটি। ন্যাশানাল মিউজিয়াম, আর্ট মিউজিয়াম, আর্কিটেক্ট মিউজিয়ামে ভরা এই শহর।
চলে আসি রক চার্চ(Temppeliaukio Church), ভেতরে সুরেলা সুরে এক মেয়ে পিয়ানো বাজিয়ে চলেছে। পরিবেশটাকে এক অদ্ভুত শান্ত করেছে এই সুর। মিষ্টি এক সুরে ছেয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। কোন তাড়া নেই, সেই সুর যেন সম্মোহিত করে ফেলেছে।
প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই পাথুরে গুহাকে চার্চের আকারে তৈরি করা হয়েছে। সূর্যের আলো সম্পূর্ণ ভাবে ঢোকানোর ব্যবস্থা হয়েছে বিম ও কাচ দিয়ে। এই শহরের আধুনিক ও ঐতিহাসিক স্থ্যাপত্য সমান তালে টুরিস্ট আকর্ষণ করে।
Toolonlahti Bay কে ঘিরে যে বিশাল পার্ক, নাম তার Finlandia। পরের দিন চলে গেলাম ফিনল্যান্ডিয়া।
এই পার্ক হেলসিঙ্কির সংস্কৃতি ও শহরের উৎসব অনুষ্ঠানের পীঠস্থান। এখানের Finland Opera house এ সারা বছর কোন না কোন অনুষ্ঠান চলে। পান্না-সবুজ এই পার্কে ঢোকার মুখেই আছে ফিনল্যান্ডিয়া হল।
এখানে শুধু হাঁটা ও সাইকেল চালানোর রাস্তা। রাস্তার পাশে বুনো গোলাপের ঝোপে ঝাঁকে ঝাঁকে গোলাপি, হলুদ, সাদা গোলাপ ফুটে আছে। সেই রাস্তা ধরে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম Winter Garden, এক বিশাল গ্রিন হাউস।
কাচের ঘরের ভেতরে প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ গাছড়া। নানান প্রজাতির ক্যাকটাস, অর্কিড দিয়ে সাজানো এই Winter Garden। স্থানীয় মানুষের পছন্দের শীতকালের এই বাগানের বয়স প্রায় একশো।
তাজা ভেজা হাওয়া, সবুজ চারিপাশ আর শুধু নিজের পথ চলার শব্দ, হঠাৎ বায়ুর চেয়েও বেশী গতিসম্পন্ন মন ছুটে গেল দেশে প্রিয়জনের কাছে। ওরা এখন মধ্য রাতের গভীর ঘুমে আছন্ন, আর এখানে মাঝ রাতে আকাশে সূর্য। হেঁটে যাই আর অবাক হই।
সমুদ্র শহর হেলসিঙ্কি। বাল্টিক সমুদ্রের তীরে পাথরে ভাঙ্গে ঢেউ। উড়ন্ত সিগাল কাঁদে, তীক্ষ্ণ নজর রাখে কোন খাবারের দিকে।
কাম্পি ষ্টেশন চত্তরে দেখলাম এক ভদ্রলোক সিগালদের খাবার দিচ্ছে। হেলসিঙ্কির সমুদ্রের দিগন্ত রেখায় বড় জাহাজ, মাছ ধরার নৌকো, মালবাহী জাহাজ ভাসে।
এই শহরের সবুজ ট্রামে চড়ে Sibelius Monument যাওয়ার পথে এক বয়স্ক ফিনিস মহিলা জানতে চাইলেন আমরা কোন দেশ থেকে এসেছি।
জানালাম – ভারতীয়। তিনি স্মৃতিচারণ শুরু করলেন। সত্তরের দশকে তিনি দিল্লিতে বহুদিন ছিলেন।
দিল্লির খাওয়া দাওয়া নিয়ে তিনি স্মৃতিমেদুর হয়ে উঠলেন। বিদেশে পথের এই হঠাৎ আলাপন ভালো লাগে, ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’।
তাঁর নামার স্টপ চলে এসেছিল। তিনি এতোই উৎসাহী হয়ে উঠলেন যে ট্রাম স্টপ থেকে কিছুদূরে তার বাড়ী দেখিয়ে নিমন্ত্রণ করে বসলেন। কিন্তু, আমাদের যেতে হবে। পথের এই আলাপটুকু স্মৃতির কোঠায় সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলাম।
ফিরে আসার সময় এগিয়ে এসেছে। শেষবারের মত হেলসিঙ্কিকে ভালো করে দেখে বিদায় জানালাম। জানি না আর কখনো আসব কিনা এই শহরে, কিন্তু এই শহরের রাস্তা ঘাট চিনে গেলাম। গভীর রাতে স্বপ্নের ঘোরে হয়তো ঘুরবো এই শহরের অলি গলিতে।
এই লেখাটা আমার আরো ভালো লেগেছে। লেখাগুলো আর একটু ঘষামাজা করে নিলে সুন্দর একটা বিদেশী ভ্রমন লেখা হয়ে উঠবে।পারলে,আলোলিকা মুখারজী-র বিদেশের ডাইরী follow কর।
বাবুনদা।