July 2011, Carcassonne, France
চার লক্ষেরও বেশী মানুষ আজ এই দিনে ওদ নদী তীরে জমায়িত হয়। দূরে দেখা যায় সতেরো শতকের কারকাসনের রোমান যুগের প্রাসাদ, যেন রূপকথা থেকে উঠে আসা এই দুর্গ-নগরী। গরমের সময়ে এখানে সূর্যাস্তের পরে পুরোপুরি রাতের অন্ধকার নামতে প্রায় দশটা হয়ে যায়।
দিনটি ছিল পূর্ণিমার পরের দিন, থালার মত চাঁদ উঠেছে ক্যাসেলের উপরে। এক ঐতিহাসিক, অপার্থিব সৌন্দর্যে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। চার লক্ষ মানুষ ক্যাসলের দিকে মুখ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে। খাবার, কফি ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। শান্ত এক মেলা বসে গেছে। সবাই আধ ঘন্টার জন্যে অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে চায়।
এই দিনে কারকাসনের ক্যাসলে প্রচুর আতশবাজি জ্বালানো হয়। আতশবাজি জ্বালানো দেখা কি এমন বড় কথা? কিন্তু যখন কোন এক ঐতিহাসিক প্রাসাদ বর্তমান প্রজন্মের জন্যে এই বিশেষ দিনে আলোর মালায় সাজে তখন বড় কথা বৈ কি। ফ্রান্সের নানান জায়গা থেকে মানুষ এই দিনের এই উৎসবে জড়ো হয়, প্রচুর টুরিস্ট ও আসে এই দিন উপলক্ষে।
চোদ্দ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস, ফ্রেঞ্চে La Fête Nationale বা ইংরিজিতে Bastille Day। জাতীয় দিনে অন্যান্য দেশের মতোই প্যারেড ইত্যাদি দিয়ে দিন শুরু হয় আর রাতে ফ্রান্সের সব শহরেই আতশবাজি হয়। কিন্তু, এখানের আতশবাজির আকর্ষণ অন্য, তুলুস থেকে কিছু দূরে কারকাসনের এই ক্যাসল দুর্গ-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, বর্তমানে UNESCO World Heritage Site।
আতশবাজি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আশেপাশের বাড়ী, রাস্তার সমস্ত লাইট নিবিয়ে দেওয়া হল। চার লক্ষ মানুষ নীরব হয়ে সেই রোমাঞ্চকর আতশবাজির অপেক্ষা করতে লাগলো। চাঁদের আলোতে ঐতিহাসিক কারকাসন ক্যাসলের এই আধিভৌতিক রূপ শিহরণ জাগায়, রোমাঞ্চ হয়। মন যেন ইতিহাসের যুগে ঘোরা ফেরা করে। বিগত দিনের ঐতিহাসিক চরিত্র যেন প্রান পায় এই দিনের এই আলোর খেলায়, ওরাও যেন এই আলোর খেলা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
১৮৯৮ থেকে প্রতিবছর বিশেষ এই দিনে মধ্য যুগের এই ক্যাসলে আতশবাজি হয়ে চলেছে। প্রথম বাজি আকাশে আলোর ফুলঝুরি হয়ে ঝড়তেই সমবেত মানুষ চিৎকার করে স্বাগত জানাল। শুরু হল পর পর আতশবাজির খেলা। ঐতিহাসিক ক্যাসল কখনো লাল, কখনো সাদা, কখনো সবুজ, কখনো বা বেগুনি আলোর ঝলকানিতে সেই রঙের আভা বিচ্ছুরণ করতে লাগলো।
চাঁদের আলোর প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক এই ক্যাসলের অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী রইলাম। কারকাসনের ঐতিহাসিক ক্যাসলের এই আলোর খেলার সামনে সেই চার লক্ষ জনসমুদ্রের মাঝে নিজেকে যেন অসীম এই কালের সন্ধিক্ষণের এক অভিনেতা বলে মনে হল। মনে হল, জীবনে আকাশের তারা নাই বা হলাম, কখনো যেন আলোর ফুলঝুরিদের মত আকাশের তারাদের একবার ছুঁয়ে আসার স্পর্ধা রাখতে পারি। “আলোকের এই ঝরনা ধারায় ধুইয়ে দাও…”
বেশ সুন্দর করে জায়গাটা সম্মন্ধে একটা ধারণা তুলে দিয়েছিস৷লেখাটা নিয়ে আর একটু নাড়াচাড়া করলে একটা সুন্দর
তথ্য ভিত্তিক রম্য প্রবন্ধ হতে পারে। চেষ্টা করে দ্যাখ,খুবভালো লাগবে পড়তে। আরও এই ধরণের কাজ পাঠাবি ।
ভালো থাকিস।
বাবুন দা