June 2013, Finland
মানুষ এখানে ঘড়ির কাঁটা দেখে চলে। ফিনল্যান্ডের মানুষ সূর্যোদয় দেখে চলে না। মানুষ এখানে দিনের আলোর সঙ্গে জীবনযাত্রার তাল মেলাতে পারে না। প্রায় কুড়ি ঘন্টা দিনের আলো মাত্র চার ঘন্টা সন্ধ্যা হয়, রাতও নয়। সেই সন্ধ্যার রঙও খুব হালকা, আকাশে এক অদ্ভুত আলোর খেলা চলে।
দিনের আলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মানুষ আমরা- আলো দেখে দেখে ঘুরে চলেছি ঘড়ির কাঁটার দিকে না তাকিয়ে। রাত এগারোটা বাজে মনেই হচ্ছে না। ফুটফুটে আলো, মানুষ ঘুরছে অদ্ভুত পোশাক পড়ে।
আসলে আমরা এখানে পৌঁছেছি শনিবারের বিকেলে। ট্রাম থেকে নেমে হোটেলে পৌঁছতে পৌঁছতে রাস্তা ঘাটে প্রচুর অদ্ভুত দর্শন মানুষের দেখা পাই।
পুরুষদের বড় বড় চুল, কারোর কারোর উদোম শরীর, সারা শরীরে হাতে-বুকে-পিঠে কিম্ভূত উল্কি আঁকা। উল্কি দেখাতেই যেন ভালোবাসে এরা। প্রতিটি উল্কি যেন এক এক গল্প, ছবি। কেউ বা কালো পোশাক, প্যান্টে মোটা শিকল পড়ে ঘুরছে।
মেয়েদের চুল রঙিন – সবুজ, গোলাপি। হাতে পায়ে উল্কি আঁকা। কালো পোশাক।
মোট কথা প্রায় প্রত্যেকেই নিজেকে এক অদ্ভুত বিদঘুটে রূপে প্রকাশ করে ঘুরছে। আমাদের কাছে বিদঘুটে কিন্তু ওদের কাছে এটাই সাধারণ, এটাই ফ্যাশন।
জানা গেল হেলসিঙ্কিতে আজ সমকামীদের বিশাল এক উৎসব ‘Helsinki Pride’। শুধু গে নয়, সমাজের প্রথাগত নিয়ম না মানা একদল মানুষের সমাগম এখানের এই মেলায়। তাই পৃথিবীর নানা দেশ থেকে সমকামীরা উপছে পড়েছে এখানে। তাই প্রথম দর্শনেই এই দলছুট মানুষ গুলোকে একসঙ্গে দেখে প্রায় অনেকেই একটু থমকে যায়। দেশ থেকে আসা একজনের সঙ্গে দেখা হতেই তিনি তো বলেই বসলেন- কি অদ্ভুত দেশ রে বাবা!
প্রায় প্রত্যেকের হাতে বিয়ারের ক্যান। প্রচুর পুলিশ পাহারা। প্রায়ই নাকি নেশার ঘোরে উগ্রতার বশে নানান গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই মারপিট হয়। বাইরে থেকে আসা টুরিস্টদের এই পরিবেশে চমকে যাওয়া বিচিত্র নয়।
তবে হেলসিঙ্কি Gay Friendly শহর। গে রা এখানে স্বাগত। নিজেকে স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করার মুক্ত এই ফেস্টিভ্যাল। সবাই নিয়ম মেনে চলবেই বা কেন?
যাইহোক, পরের দিন কিন্তু সব স্বাভাবিক। মেলা শেষ। সবাই ফিরে গেছে নিজের জায়গায়।
হেলসিঙ্কি ফিরে এসেছে নিজের প্রতিদিনের ছন্দে। আমাদের দিন রাতের হিসাব গেছে গুলিয়ে। ভোর চারটের দিকে মুখে সকালের আলো পড়ে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। গরমে জানালা খুলে শুয়েছিলাম, দেখি আকাশ রাঙিয়ে সূর্যোদয় হচ্ছে। কি অপূর্ব এই পৃথিবী। সকালেই বেড়িয়ে পড়লাম হেলসিঙ্কি আবিষ্কারের জন্য।