শহর বার্সিলোনার গায়ে কতই না জাঁক, ঐশ্বর্য। পথের দুই ধারে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সারি। আর স্পেনের রাজধানী, এই শহরের ঐতিহাসিক ঐশ্বর্যের সাক্ষী হয়ে, হেঁটে যেতে যেতে, পথের পাশের ল্যাম্প পোস্ট গুলোর দিকে অনেকেরই চোখ চলে যায়।
অবশ্য, বার্সিলোনার রাজপথের পাশের ঐ ল্যাম্প পোস্ট গুলো তাঁদের নিজস্ব সৌন্দর্যে এতই পরিপূর্ণ, দৃষ্টি সুন্দর এবং অভিনব, যে বহিরাগত মানুষের চোখে পড়তে বাধ্য।
বার্সিলোনা শহরের চারিদিকে নানান স্থাপত্যে, স্পেনের বিখ্যাত আর্কিটেক্ট অ্যান্টনি গদির ডিজাইনের অভিনবত্ব ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্য ও অভিনব স্থাপত্যের শহর বার্সিলোনা – আর বার্সিলোনাকে সেই আশ্চর্য স্থাপত্য দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন অ্যান্টনি গদি, তাই বার্সিলোনা তাঁকে বার বার স্মরণ করে।
শুধু তাঁর স্থাপত্য দেখতে, তাঁকে জানতে, অনেকেই বার্সিলোনা শহরে আসে। বার্সিলোনার শহরের স্থাপত্যের গায়েই শুধু যে অ্যান্টনি গদির শিল্প রুচির পরিচয় জড়িয়ে আছে তা নয় – বার্সিলোনা শহরের পথে, বিখ্যাত ল্যাম্প পোস্টেও গদির শিল্প রুচির পরিচয় পাওয়া যায়।
বার্সিলোনার অন্যতম বিখ্যাত স্কোয়ার Plaça Reial এর কেন্দ্রে, যে দুই অলঙ্কৃত ল্যাম্প পোস্ট দেখা যায়, যা কিনা এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ – অ্যান্টনি গদি তাঁর কেরিয়ারের শুরুর দিকে, ১৮৭৮ এ এই ল্যাম্প পোস্ট দু’টো ডিজাইন করেছিলেন।
বার্সিলোনা শহরকে সাজিয়ে তোলার জন্যে, অ্যান্টনি গদিকে ল্যাম্প পোস্ট ডিজাইন করতে বলা হয়েছিল।
অ্যান্টনি গদি তাঁর ডিজাইন এতই নিখুঁত ভাবে পরিকল্পনা করতে ভালবাসতেন, যে তিনি – তাঁর ল্যাম্পপোস্টের ডিজাইন সহ, ইউরোপের শহরে কেন ল্যাম্প পোস্টের প্রয়োজন, কেন বার্সিলোনা শহরের কেন্দ্রে এসে মানুষের মেলামেশা প্রয়োজন, মানুষের পথে সময় কাটানোর প্রয়োজন, বার্সিলোনা শহরকে সন্ধ্যা ও রাতে সুরক্ষিত করতে কেন ল্যাম্প পোস্টের প্রয়োজন, কোন ধাতু দিয়ে ল্যাম্পপোস্ট তৈরি করলে সবচেয়ে ভালো হয় – এ নিয়ে অ্যান্টনি গদি, বার্সিলোনা শহর কতৃপক্ষের কাছে, নয় পাতার এক বিস্তারিত রিপোর্ট জমা করেছিলেন। আর, যার ফল হয়েছিল বার্সিলোনার অভিনব ল্যাম্পপোস্ট।
ছয়টি বাতির সমন্বয়ে তিনি যে ল্যাম্পপোস্টের ডিজাইন তৈরি করেছিলেন, তাঁর মাথায় পাখা যুক্ত এক হেলমেট, ও দুই সাপ দেখা যায় – যা কিনা বার্সিলোনা শহরের সুরক্ষা ও ঐশ্বর্যের প্রতীক।
তারপর, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বার্সিলোনা শহরের রাজপথ Passeig de Gràcia কে ঢেলে সাজানোর জন্যে কাস্ট আয়রন দিয়ে তৈরি, কারুকার্যময় বত্রিশটা ল্যাম্প পোস্ট লাগানো হয়েছিল – যা আজও বার্সিলোনা শহরের পথের শোভা বর্ধন করে। প্রতিটি ল্যাম্প পোস্টের নিচে পাথরে বাঁধানো বসার বেঞ্চ – পথের পাশে ঐ ল্যাম্প পোস্টের কারুকাজ দেখতে দেখতে, ক্ষণিক বসে, বিশ্রাম নেওয়া যেতেই পারে। সামারের উজ্জ্বল দিনে অনেকেই ঐ ল্যাম্পপোস্ট গুলোর নিচে বসে, এই শহরের চলমান জীবনের প্রাণবন্ত ব্যস্ততা, মানুষের আসা যাওয়া দেখতে ভালোবাসে।