এদিকে, ভুলে গেলে চলবে না, আইনস্টাইনের গবেষণার শ্রেষ্ঠ সময়ে পৃথিবী দু দু’টো বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে, আর সেই বিশ্ব যুদ্ধের প্রভাব যে তাঁর উপরে, তাঁর কাজের উপরে পড়ে নি, তাঁর চিন্তা ভাবনার উপরে পড়ে নি, তা নয়। তাঁর অনেক জার্মান সহকর্মী ও বৈজ্ঞানিক বন্ধু যুদ্ধের জন্যে অস্ত্র তৈরির গবেষণা করতে শুরু করে দিয়েছিল।
তাঁর খুব কাছের বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন Fritz Haber , যুদ্ধে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের জনক বলা যায় – প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তার তৈরি বিষাক্ত গ্যাস হাজার হাজার মানুষকে দমবন্ধ করে মেরেছে। অথচ, দু’জন সম্পূর্ণ দুই মেরুর ছিলেন।
আর সেই সময় যখন বাতাসে বারুদের গন্ধ ভাসছিল, তাঁর চিন্তা শুধু যে বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয় – তাকেও রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করতে হয়েছিল – এমনকি, হিটলারের উঠে আসা নিয়ে জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তিনি কলমও ধরেছিলেন।
জার্মানির বাসিন্দা হিসাবে তিনি মারাত্মক এক ন্যাশনালিজমের সাক্ষী ছিলেন – দেখেছিলেন, কি ভাবে কট্টর ন্যাশনালিজম হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলে, অন্ধ করে দেয়, যুক্তি বোধ হারিয়ে ফেলে মানুষ। কি ভাবে এক মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে যায় অন্ধ, উন্মাদ ন্যাশনালিজম – অসুস্থ সেই সময়ে তখন কেউ কারোর সুস্থ কথা, মানবতার কথা, মানুষের কথা শুনতে রাজি থাকে না।
জার্মানিতে তখন উগ্র ন্যাশনালিজমকে যেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার রক্তে নুনের মতো মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল – মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলেই হাই-প্রেশার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল – যুদ্ধ। আর আশ্চর্যের বিষয় তৎকালীন বুদ্ধিজীবীরাও সম্মোহিতের মতো সেই তীব্র ন্যাশনালিজমের স্বীকার হয়েছিল। তাঁর কথায় – Nationalism is an infantile disease. It is the measles of mankind.
সমগ্র পৃথিবী যখন এক উন্মত্ততায় মত্ত ছিল, সেই সময়ে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের চিন্তাধারার কঠিন সমীকরণটির সমাধান কষতে ব্যস্ত ছিলেন – সে ছিল বড়ই কঠিন এক কাজ।
তিনি বলেছিলেন – তাঁর অবস্থা ছিল বিশাল এক লাইব্রেরীতে বিভিন্ন ভাষায় সাজানো প্রচুর বইয়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক শিশুর মতো। এই মহাবিশ্ব আশ্চর্য ভাবে সাজানো, এক কঠোর নিয়মে চলে – যার প্রায় কিছুই আমরা জানি না। আর তিনি সেই মারাত্মক ভাবে সাজানো মহাবিশ্বের রহস্যের সমাধান চেয়েছিলেন।
তিনি ভাবলেন – যদি তাঁর থিয়োরি প্রমানের জন্যে পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময়টি বেছে নেওয়া যায়?
তিনি তাঁর জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির জন্যে উপযুক্ত সময় বেছে নিয়েছিলেন – পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময়, যখন সূর্য সম্পূর্ণ ভাবে ঢেকে যায়। তাঁর গণনা বলল, পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময় জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি প্রমান হতে পারে। শুরু হল তাঁর তোড়জোড়।
চলবে