পিসার হেলানো টাওয়ার (Leaning Tower of Pisa)

পিসার হেলানো টাওয়ারের উপর থেকে দুই মাপের লোহার বল ফেলে দিয়ে গ্যালিলিওর সেই বিখ্যাত পরীক্ষাকে কে না জানে। এখানে এসে টুরিস্টের ভিড় দেখে মনে হয় – কে কার জন্যে বিখ্যাত কে জানে, গ্যালিলিওর পরীক্ষাটি না পিসার হেলানো টাওয়ারটি।

মনে হয়, একটু হেলানো বলেও বোধহয় পৃথিবীর মানুষের  কাছে পিসার এই হেলানো টাওয়ারের এতো আকর্ষণ, আর সেই খুঁতের জন্যেই মনে হয় আরও বেশী করে মনে হয় এ মানুষেরই হাতের তৈরি – মানুষ মাত্রেই একটু ভুলচুক হয়েই যায়।

এক সময়ে পিসা ইতালির মধ্যে সবচেয়ে বেশী সম্বৃদ্ধশালী শহর ছিল, আর পৃথিবীর মানুষকে সেই ঐশ্বর্যের জাঁক জমক, চমক, অহং দেখানোই ছিল পিসার এই হেলানো টাওয়ারের লক্ষ্য। লক্ষ্য ছিল সুক্ষ কারুকার্যে পূর্ণ এক টাওয়ার তৈরি হবে, আর পৃথিবীর মানুষ অবাক হবে। কিন্তু…

প্রথমে তো আর এই টাওয়ারটিকে হেলানো করে তৈরি হয় নি, তিনটে ফ্লোর তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে টাওয়ারটি বিশেষ দিকে হেলতে শুরু করল, বিশেষজ্ঞরা টাওয়ারের নীচের নরম মাটি ও অগভীর ভিত এই অস্বাভাবিক হেলে পড়ার জন্যে দায়ী বলে মনে করে। আবার অদ্ভুত উপায়ে সেই হেলানো অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে রইল টাওয়ারটি, ভেঙ্গেও পড়ল না।

যাইহোক, হেলে পড়ার পরে পিসার এই টাওয়ার তৈরির কাজ বহু বহুদিন বন্ধ ছিল, পিসার শহরবাসিরা তখন মেডিটেরিয়ানের নানান জায়গার সঙ্গে নানান ছোট খাটো যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যস্ত ছিল। যুদ্ধ শেষে শান্তি এলে, আবার শুরু হল টাওয়ার তৈরির কাজ, বহুদিন বন্ধ থাকার ফলে টাওয়ারটি মাটিতে ভালো ভাবে গেঁথে যায়, তাই উপরের ফ্লোর গুলোও তৈরি হয়ে যায় ধীরে ধীরে। যাইহোক, টাওয়ার তো মধ্য যুগে দাঁড়িয়ে গেল হেলানো অবস্থায়।

কিন্তু, বিংশ শতাব্দীর টুরিস্টের স্রোত, পরিবেশ বদলের জন্যে হাওয়ার গতিবেগের পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ যে টাওয়ারটিকে আরও হেলিয়ে দিতে শুরু করল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে শুরু হল নানা গবেষণা, ভাবনা চিন্তা, অঙ্কবিদরা শুরু করল আঁক কষা,  কি ভাবে পৃথিবীর এই আশ্চর্য স্থাপত্যকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া যায় তাঁর পুরনো হেলানো কোণ। প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে, ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতায় পিসার টাওয়ার ফিরে পেল তাঁর পুরনো হেলানো অবস্থা।

কে বলে, পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর সবই নিখুঁত নিটোল সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ? একটু অসম্পূর্ণতা, একটু খুঁত, একটু ভুল তো প্রকৃতির রাজ্যেও দেখা যায়। আর এ তো মানুষের তৈরি হেলানো টাওয়ার, একটু ভুল যেন পিসার এই বেল-টাওয়ারে আরও বেশী সৌন্দর্য যোগ করেছে, অনন্য করেছে, করেছে পৃথিবীর আশ্চর্য স্থাপত্যের মধ্যে এক অন্যতম স্থাপত্য। আজও যখন জীবনের কোন এক হলুদ দুপুরে ভাবি, গিয়েছিলাম, দেখেছিলাম, আশ্চর্য হয়েছিলাম, ছিলাম সেখানে – এক অদ্ভুত ভালো লাগার রেশ ছুঁয়ে যায় আমার হলুদ দুপুরকে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Italy, Southern-Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s