ত্রেভি ফোয়ারা রোমের বারোক স্থাপত্যে ও শিল্পের এক মহান অলংকার। জল ও ইতালির মার্বেল মিলে কেমন এক অপূর্ব যুগল হতে পারে, শিল্প হতে পারে – তার এক আশ্চর্য নমুনা এই ত্রেভি ফোয়ারা। রোমে এসে টুরিস্টদের ত্রেভি ফোয়ারার পাশে একবার আসতেই হয় – শহরের বড় তিনটে রাস্তা ফোয়ারার পাশে এসে মিলেছে।
এই ফোয়ারার স্বচ্ছ জলে খুচরো পয়সা ফেলা বহুদিনের প্রথা, তাই এখানে এলে ফোয়ারার দিকে পেছন করে মাথার উপর দিয়ে ইউরো ছুঁড়ে ফেলা টুরিস্টদের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, আর সেই ছুঁড়ে ফেলা ইউরো কুঁড়িয়ে নেওয়ার জন্যেও বহু স্থানীয় মানুষ জলে নেমে যায়, তবুও দিনের শেষে রোম শহর কতৃপক্ষ সমস্ত খুচরো সংগ্রহ করে চ্যারিটি সংস্থায় দান করে দেয়। অনুমান করা হয় – টুরিস্টরা প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউরো এই ফোয়ারার জলে ছুঁড়ে ফেলে।
দিনের যে কোন সময়েই ফোয়ারার সামনে খুবই ভিড়, টুরিস্টদের মধ্যে ফটো তোলার, ফোয়ারার জলে খুচরো ছুঁড়ে দেওয়ার জন্যে রীতিমত হুড়োহুড়ি। তাঁর মধ্যেও দেখি ফোয়ারার সামনে যাওয়ার সিঁড়ির ধাপে বসে এক বাবা তাঁর ছেলেকে এক মনে রোমের ইতিহাস পড়াচ্ছে – সত্যি, ইতিহাস বিষয়টাকে যদি ছেলেবেলায় এমন জীবন্ত করে পড়ানো হোতো, হয়তো বিষয়টাকে এতো তেতো লাগত না।
যাইহোক, বিশাল ফোয়ারার উপরের মূর্তি গুলোয় শেষ বিকেলের আলো পড়ে এক অদ্ভুত ছবি তৈরি হয়েছে। গ্রীক পুরাণের জলের দেবতা নেপচুন এই ফোয়ারার কেন্দ্রে – সাগর ঘোড়ায় চালানো এক রথের উপরে নেপচুন দাঁড়িয়ে, আর রথের ঘোড়া গুলো কোনটা শান্ত, কোনটা উদ্ধত, উত্তেজিত – সাগরের শান্ত, উত্তাল, উদ্ধত রূপের প্রতীক ঐ ঘোড়াগুলো। আসলে জল বন্যা আনে, ভাসিয়ে দিয়ে যায় ফসল, মানুষ, ও প্রাণীকুল – আর জলের এই ভয়ানক বিনাশকারী উত্তালতাকে পোষ মানিয়ে নিজের কাজে লাগানোর প্রতীক এই ত্রেভি ফোয়ারা।
রোমের এই বিখ্যাত ফোয়ারা হলিউডের বহু বিখ্যাত চলচিত্রে দেখা গেছে। রোমের মানুষের বড় প্রিয় এই ফোয়ারা, রোমানদের গর্ব এই ফোয়ারা।
বহুবার প্রাচীন এই ফোয়ারার সংস্কার হয়েছে, বর্তমানে ইতালির বিখ্যাত ফ্যাশন কোম্পানি ফেন্দি এই ফোয়ারার বৃহৎ সংরক্ষণের কাজ হাতে নিয়েছে, ত্রেভি ফোয়ারার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংরক্ষণ। এখন ফোয়ারার জল শুকিয়ে গেছে – বহু টুরিস্ট এখন জল হীন শুষ্ক ফোয়ারা দেখেই ফেরে।
নিজেদের ঐতিহাসিক জাতীয় সম্পত্তিকে গুছিয়ে, সাজিয়ে, আকর্ষণীয় করে রাখা যে ইউরোপিয়ানরা খুবই ভালো জানে – হয়তো পৃথিবীর নানা দিকের মানুষ এখানে এসে সেই গুণটুকু শিখে নিতে চায়, নিজের মধ্যে এই গুণের লালন করতে চায়।