মহাবিশ্বের রহস্যের সমাধান যার সমীকরণে (ছয় )– আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

An Old refractor telescope in Toulouse, France

আইনস্টাইনের কথা অনুযায়ী – দূর নক্ষত্রের আলো সূর্যের কাছে এসে যে বেঁকে যায় তা পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময় দেখা যেতে পারে। কিন্তু, সেই সময়ে তাঁর এই অদ্ভুত কথা কে বিশ্বাস করবে? উপযুক্ত প্রমান চাই যে।

সালটা ১৯১২, ঐ বছরের শেষের দিকে তাঁর নিজের গননার উপরে সম্পূর্ণ বিশ্বাস হল, তিনি ভাবলেন, তাঁর দীর্ঘ দিনের চিন্তার ফসল রিলেটিভিটি থিয়োরি প্রমানের একমাত্র উপায় পাওয়া গেছে – পূর্ণ সূর্যগ্রহণ – তাই তিনি সেই বছরেই যুগান্তকারী পেপারে তাঁর গননার কথা লিখলেন।

সেখানে তিনি তৎকালীন ইউরোপিয়ান জ্যোতির্বিদদেরকে গননার সাহায্যে তাঁর থিয়োরির সত্যতা দেখিয়ে দিলেন, ও জ্যোতির্বিদদের বললেন – যাও, পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময়ে গিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ কর। শুধু পর্যবেক্ষণ নয় – উপযুক্ত প্রমানের জন্যে ফোটো তুলতে হবে। এমনকি, তিনি সেই সময়ের ইউরোপের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদকে লিখেছিলেন – যদি, তাঁদের মধ্যে কেউ সূর্যগ্রহণের সময়ে আলোর বেঁকে যাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে রাজি হয়। কিন্তু, কেউই গুরুত্ব দেয় নি, কেউই তাঁর ডাকে সারা দেয় নি।

আইনস্টাইনকেও বিষণ্ণ হতে হয়েছিল – আইনস্টাইনের জন্যে সে ছিল এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।

ঠিক সেই সময় বার্লিন অবজারভেটরির রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট – এক অল্প বয়সী যুবক আইনস্টাইনের ডাকে সাড়া দিল – আইনস্টাইনকে সে খুবই শ্রদ্ধা করতো – তাঁর কথায়, সে আইনস্টাইনের জন্যে পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি ছিল।

কুড়ির ঘরের অল্প বয়সী যুবকের মনে নতুন জিনিসের প্রতি কৌতূহল ছিল – তাঁর মনে হয়েছিল, আইনস্টাইনের এক্সপেরিমেন্ট তাঁর জন্যে খুবই দরকারি, তাকে এর অংশীদার হতে হবে – যুবকের নাম – Erwin Finlay-Freundlich ।

নতুন জ্যোতির্বিদ, আইনস্টাইনের থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি প্রমানের জন্যে আইনস্টাইনকে সাহায্য করবে – আইনস্টাইন কিন্তু কোন দ্বিধা না করে তাকে চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। সেখানে, নতুন জ্যোতির্বিদের প্রতি বিন্দুমাত্র উপেক্ষা ছিল না, সন্দেহ ছিল না – বরং ছিল প্রচুর আমন্ত্রণ, আইনস্টাইন যেন উৎসাহে ফুটছিলেন। সেখানেই মানব আইনস্টাইনের উদারতা।

আইনস্টাইন, সদ্যবিবাহিত Erwin কে জুরিখে নিমন্ত্রণ করলেন – ও অডিটোরিয়ামে প্রচুর বিজ্ঞানীর সামনে Erwin কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন – ঐ যুবক পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময় তাঁর থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি প্রমানে সাহায্য করবে। কথাটা শুনে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিল।

তারপর, শুরু হল নানা ধরণের তোড়জোড়, গণনা, প্রস্তুতি। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের এক সমস্যা হল – পৃথিবীর এক বিশেষ জায়গা থেকেই পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যায়, কারণ সূর্যের উপরে চাঁদের ছায়া পৃথিবীর বিশেষ জায়গার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই দেখা যায়। আইনস্টাইন দেখলেন, পরবর্তী পূর্ণ সূর্যগ্রহণ ২১ অগাস্ট ১৯১৪ তে Crimea – রাশিয়ার এক জায়গায় দেখা যাবে।

উৎসাহী যুবক, Erwin,  তার বার্লিনের বসকে বলল – আইনস্টাইনের সঙ্গে কোলাবরেশন করে রাশিয়া যাওয়া যাক, এই প্রোজেক্টে কিছু অর্থও বিনিয়োগ করা যাক – কিন্তু, Erwin এর বস, এক কথায় খারিজ করে দিল – বলল – অসম্ভব।

আইনস্টাইনও রেগে যান – এই কথায় তিনি সত্যিই রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু, যুবক Erwin কিছুতেই এই বিশাল সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র ছিল না।

ইউরোপের সাইন্টিফিক সোসাইটির কোন সহযোগিতা না পেয়ে, Erwin ক্যালিফোর্নিয়ার Lick Observatory  র ডিরেক্টর, William Wallace Campbell কে চিঠি লিখলেন। Campbell সেই সময়ে solar eclipse photography র পথিকৃৎ ছিলেন – বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, কেউই সূর্যগ্রহণের ফোটো তুলত না, বৈজ্ঞানিকদের বিবরণ, পর্যবেক্ষণ ও স্কেচের উপরে ভিত্তি করেই গণনা হত – সেই ক্ষেত্রে বিবরণের অমিল ও যেমন দেখা যেত, মতবিরোধও হোতো প্রচুর।

চলবে

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Inspirational and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s