পর্তুগালের ভিয়েনা দো কাস্তেলোয় কয়েকদিন- ৩ (Viana do Castelo, Portugal)

July 2012, Viana do Castelo, Portugal 

উত্তর পর্তুগালের এই শান্ত মফঃস্বল শহরটি সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই নির্জন হয়ে যায়, অদ্ভুত লাগে। রাতের খালি শহরে আমারাই যেন ঘুরে বেড়াই। রাতে সমুদ্রের তীরের সান্তা লুজিয়া পাহাড়ের বেসিলিকা বাতিঘরের মত জ্বলে। ছোট্ট বন্দরে অনেক ছোট ছোট জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকে ভূতুড়ে ভাবে।

এক হাসপাতাল জাহাজ ‘Gil Eannes’ জলের ধারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রাতের নির্জনতা দেখে। এই জাহাজ এখন বৃদ্ধ, বহু আগে যখন পর্তুগীজ জেলেরা মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরতে যেত, বহুদিন সমুদ্রে থেকে মাছ ধরার সময় মাঝে মাঝে অনেকে অসুস্থ হত, তাঁদের চিকিৎসার জন্যে এই ভাসমান হাসপাতাল জাহাজ ছিল। এখন এই জাহাজ এক মিউজিয়াম।

ছোট্ট জায়গা, অথচ কি সযত্নে সাজানো প্রতিটি জাতীয় সম্পত্তি। দেশকে ভালোবাসা মানে সবসময়ই তো যুদ্ধে প্রান দেওয়া নয়, দেশের প্রতিটি জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা ও সম্মান দেওয়াও দেশকে ভালোবাসার রূপ। পর্তুগীজ স্বদেশ প্রেমের নমুনা এই ছোট্ট শহরের পরিছন্নতাতেই বোঝা যায়।

ভিয়েনা দ কাস্তেলো থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক বিশাল বাগান বাড়ী ‘Quinta de Sao Joao’ তে কনফারেন্স ডিনার আয়োজিত হয়েছে।  বিশাল এই Quinta আসলে এক বিশাল বাগানবাড়ী, বিশাল আঙুর ক্ষেতের মাঝে খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়েছে। Restaurante Camelo এর অন্তর্গত এই Quinta পর্তুগীজ স্থানীয় ভালো ও সুস্বাদু খাবার দাবারের জন্যে বিখ্যাত, কারণ বহু খাদ্য পুরষ্কার, রান্না পুরষ্কার ওদের দখলে। শুনেছি আঙুর তোলার সময়ে, দিনের বেলা এখানে বিদেশীদের জন্যে পা দিয়ে আঙুর থেকে রস তৈরির উৎসব হয়, যা দিয়ে পরে ওয়াইন তৈরি হয়।

সন্ধ্যার আগেই সবাই পৌঁছে গেলাম। পর্তুগীজ ট্র্যাডিশনাল পোশাকে সেজে নারী পুরুষেরা পর্তুগীজ লোক সঙ্গীতের সুরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। অদ্ভুত সুন্দর এক ট্র্যাডিশনাল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এই ট্র্যাডিশনাল নাচ গানের দলে নানা বয়সের নারী পুরুষ আছে। খুব মন দিয়ে গান গাইছে সবাই, ভাষা না বুঝলেও গানের সুর উপস্থিত সবাইকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। অনেকেই গানের তালে তাল দিচ্ছে। এই দলের মেয়েরা ঘুরে ঘুরে নাচছে, গোল হয়ে ঘাগরা ফুলে উঠছে। ছেলেদেরও আকর্ষণীয় পোশাক- কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট কোমরে লাল ফেট্টি মাথায় টুপি। ওরা এই ছোট্ট গ্রামেও নিজেদের ট্র্যাডিশনকে কাছে টেনে নিয়ে বিদেশীদের মনোরঞ্জন করছে। ওদের নানা বয়সের এই দলের পক্ষে নিজেদের ট্র্যাডিশনকে সমানে চালিয়ে যেতে বাধা নেই।

নানান রকমের এপাটাইজার টেবিলে রাখা, কিছুক্ষণ পরে গানের সুরে সুরে ডিনার পরিবেশন শুরু হল। প্রথমেই এলো মেলন অর্ধেক কেটে মাঝের গর্তের মধ্যে লাল port wine দিয়ে এক স্টারটার। পরে মেন কোর্সে রোস্টেড হাঁসের মাংস সঙ্গে নতুন আলু রোস্ট আর প্রচুর সবজি। শেষ পাতে এলো চকোলেট আইসক্রিম ও পায়েস। হ্যাঁ, ঘন দুধ ও চালের পায়েসই বটে। ছোট্ট বাটিতে পায়েস ওপরে আবার দারুচিনির গুড়ো ছড়ানো – ভারতবর্ষের প্রভাব! অবশেষে পর্তুগীজ কফি। নাচে গানে মুগ্ধ হল হৃদয় মোদের, পর্তুগীজ খাদ্যে তৃপ্ত হল রসনা।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s