May 2009, Vevey, Switzerland
সুইস রেলের সাতদিনের পাস কেনার পর মনে হল যেন ভুতের রাজার তিন বরের এক বর পেয়ে গেলাম। এখন ভগবানের নিজের হাতে আঁকা দেশটির ‘যেথা খুশি যেতে পারি’। এই পাসে সুইজারল্যান্ডের জলযান থেকে শুরু করে ট্রেন সব কিছুই চড়া যায়।
বিশাল লেক জেনেভার পাশে ছোট্ট শান্ত ঘুমন্ত এক জায়গা Vevey। আকাশ সেদিন সেজেছিল ধূসর সর্বনাশা সাজে। এই শহরের ছবির একদিকের দৃশ্যের French Alps মুখ লুকিয়েছিল সেই গহন মেঘের আঁচলে। দেখেছিলাম ভেভের সেই অপূর্ব রূপ। ধূসর আকাশের ছায়ায় লেক জেনেভার জলও হয়েছে ধূসর। অসীম আকাশ ও অপূর্ব এই ছবির প্রেক্ষাপটে শুধু আমরা দু’জন। জেনেভা থেকে Lausanne এর পথে এই ছোট্ট শহর সত্যি নজর কেড়ে নেয় ।
এই ছোট্ট শহর ইউরোপের বহু নামী মানুষের স্মৃতি বহন করে। এখান থেকে কিছু দূরে পঁচিশ বছর চার্লি চ্যাপলিন থেকেছিলেন, এবং এখানেই চার্লি চ্যাপলিনের সমাধি আছে। চকোলেট Nestlé র জন্ম এই শহরে এবং ইন্টারন্যাশনাল হেড কোয়ার্টার এই ছোট্ট শহরে। পৃথিবীর নানা দেশের মানুষ কর্ম উপলক্ষে এই ছোট্ট শহরে এসেছে বহু যুগ ধরে।
শহরটিকে দেখে জাহাজের জন্যে অপেক্ষায় থাকি। দূরে জাহাজ এক অপূর্ব ছবি তৈরি করতে করতে জল কেটে এগিয়ে আসছে। ভেভে থেকে Montreux এর পথে আমাদের জাহাজ ভেসে পড়ল। ফেব্রুয়ারির মাঝামঝি সময়ে বাতাসে উত্তুরে হাওয়ার তীব্র কামড় থেকে বেঁচে জাহাজে উঠে যেন প্রান পেলাম।
প্রতিটি বাঁকে অপূর্ব দৃশ্য। জলপথে Montreux থেকে কিছু দূরে দেখা যায় অপূর্ব সেই Château de Chillon। লর্ড বায়রন এখানে বেড়াতে এসে François Bonivard এর গল্প শুনেছিলেন। Bonivard বহুদিন Château de Chillon এ বন্দী ছিলেন। সেই গল্প ও Château de Chillon এর পরিবেশ বায়রনকে প্রেরণা দিয়েছিল The Prisoner of Chillon কবিতাটি লেখার। আর সেই কবিতা ছবির মত প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটের এই দুর্গটিকে আরও বিখ্যাত করেছে।
জলপথে যেতে যেতে আসে পাশের গ্রামে শহরে সুইস ইঞ্জিনিয়ারিং এর নিদর্শন দেখে আশ্চর্য হতেই হয়। শুধু কি মানুষেরই আশ্চর্য কীর্তি? প্রকৃতিও তো আপন মনে ছবি এঁকেছে এখানে। প্রতিনিয়ত আকাশে নানা পোঁচের রঙ ছড়িয়ে চলেছে প্রকৃতি। আলো ছায়ার এই খেলা দেখতে দেখতে লেক জেনেভার বুকে ষ্টীমার এগিয়ে চলেছে।