October 2013, Toulouse, France
তুলুসের এস্কুইরলের সামনে বড় রাস্তা দিয়ে যেতে আসতে Musée des Augustins চোখে পড়বেই। ফ্রান্সে প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সমস্ত মিউজিয়াম জনসাধারণের জন্যে বিনামূল্যে খুলে দেওয়া হয়, এমনকি বাচ্চাদের জন্যে ছবি আঁকার আসর বসে। রবিবারের দুপুরে তাই হানা দিলাম মিউজিয়াম।
কোন কোন মানুষের কাছে মিউজিয়াম কোন বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জায়গা। কারোর কাছে শুধু অতীতের ছায়া কিংবা কারোর কাছে শুধুই আশ্চর্য ইতিহাস সংরক্ষণের জায়গা।
ফ্রেঞ্চ রিভলিউশনের আগে গথিক স্টাইলে তৈরি এই মিউজিয়াম ফ্রান্সের অন্যতম প্রাচীন মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে ঢোকার সময়েই একদিকের বারান্দায় সারি সারি Gargoyle পরিবেশকে এক অদ্ভুত ভূতুরে করেছে। এখানে রবিবারের দুপুরে অনেকেই মিউজিয়ামে বেড়াতে আসে। এখানে মানুষ অনেক বেশী নিজের দিকে দেখে, নিজের দেশের ইতিহাস থেকে অনেক কিছু জানতে চায়, বুঝতে চায়।
কেউ মিউজিয়ামে আসে শুধু দেখতে, কেউ আসে জানতে আবার কেউ বা মিউজিয়ামে আসে নতুন এই গতিময় পৃথিবী থেকে ছুটি নিয়ে একটু পুরনোর মুখোমুখি দাঁড়াতে। বিশাল ঠাণ্ডা হলে কিছুক্ষণ একা থাকার জন্যেও মিউজিয়াম এক আশ্চর্য রহস্যময় জায়গা।
চারিদিকে মিউজিয়াম বিল্ডিঙের মাঝে যে জায়গা, সেখানে শীতের নানা ধরণের সবজি বাগান এখানের পরিবেশকে আরও বেশী ঘরোয়া করে। মধ্যযুগীয় এই বাগানের পাশে বিশাল বারান্দায় বসেছে বাচ্চাদের ছবি আঁকার আসর। কচি মনকে ইতিহাস ও নির্জন প্রকৃতির মাঝে অতি সযত্নে লালন করে ইউরোপের মানুষ। বর্তমান সময়ের এই ছোটদের তো এগোতে হবে ইতিহাসকে সম্বল করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। তারই প্রথম পাঠ এই মিউজিয়ামের বারান্দায়।
তুলুসের এই মিউজিয়ামে গথিক, Romanesque ভাস্কর্য থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর বহু নামী চিত্রকরের পেন্টিং আছে। সময় শুধু মানুষের মুখেই বলীরেখা ফেলে না, পাথরের এই ভাস্কর্যের উপরেও সময় থাবা বাড়ায়। তাই মিউজিয়ামের বহু ভাস্কর্যের উপরে এখনো অনেক আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ চলছে। Notre-Dame de Grasse মূর্তিটিকে কয়েক ধাপে সংরক্ষণ করে বর্তমানের রূপ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের জীবন থেকে নির্জনতার জায়গা ধীরে ধীরে কেমন হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শহরের মাঝে বিশাল মিউজিয়ামের আনাচে কানাচে এখনো অতীতের নিশ্চিন্ত নির্জনতা থমকে আছে। বিশাল মিউজিয়ামের ঠাণ্ডা দেওয়াল গুলোর সোঁদা গন্ধে এঘরে ওঘরে এখনো যেন অতীতের দিন জীবিত। শীতের দুপুরে মিউজিয়ামের লম্বা চক মিলান বারান্দায় সূর্যের আলো যখন তেরছা হয়ে পড়ে, কি সুন্দর এক আলোর নক্সা হয়। হলুদ আলোর সেই নক্সা দেখে ছেলেবেলায় শীতের রোদে তৈরি বহু নক্সার স্মৃতি ফিরে আসে।