December 2011, Mysore, India
‘কি রে তোরা মাইসোরে একবার আয়? কবে আসছিস?’ – ফোনে হৈমন্তীদির আমন্ত্রণের সুর বহুদিনের।
‘আসবো, আসবো’ – বলতে বলতে হঠাৎ যে মাইসোর যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে যাবে ভাবিনি। সাউথে বেড়াতে গিয়ে মাদুরাই থেকে হৈমন্তীদিকে ফোন করলাম।
‘হৈমন্তীদি, আমরা মাদুরাই থেকে ফোন করছি’ – কথা শেষ করার আগেই হৈমন্তীদির উচ্ছ্বসিত গলা ফোনের ওদিক থেকে ভেসে এলো।
‘কি, শিগগিরি এখানে চলে আয়। খুব ভালো হবে, আমি এখানে সমস্ত ঘোরার ব্যাবস্থা করে দেব,আমার এখানে থাকবি। চলে আয়, চলে আয়।’
সকালে মাইসোর ষ্টেশনে আমাদের ট্রেন ঢুকলো। হৈমন্তীদি ওর স্কুটি নিয়ে হাসিমুখে অপেক্ষা করছিল। বহুদিন পরে হৈমন্তীদির সঙ্গে দেখা। ইউনিভার্সিটি দিনের বন্ধু ও সিনিয়র হৈমন্তীদি এখনো সেইরমই প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি। একমাত্র সিনিয়র যার সঙ্গে আমাদের এখনো খুব ভালো যোগাযোগ রয়ে গেছে। কয়েকটা অটোতে লাগেজ তুলে নিয়ে হৈমন্তীদির স্কুটি ফলো করে পৌঁছে গেলাম ওর বাড়ী।
মাইসোর বেড়ানোর সমস্ত ব্যাবস্থা হৈমন্তীদি করে রেখেছে। ড্রাইভার সহ এক সাদা গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো। ড্রাইভারটি অনেকটা গাইডের মতো, সারাদিন সমস্ত বিশেষ দ্রষ্টব্য জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবে।
মাইসোর ভারতবর্ষের দ্বিতীয় পরিষ্কার শহর। আসলে আমাদের দেশের ঘনবসতি পূর্ণ শহরগুলো এতো অপরিষ্কার যে পরিষ্কার শহরের এক তালিকা তৈরি হয়। যাইহোক, মাইসোরকে প্রথম দর্শনে ভালো লেগে যাবেই। ছিমছাম শহরটির বুকে এক রাজকীয় গাম্ভীর্য আছে। প্রচুর সবুজ দিয়ে সাজানো এক শহর। মাইসোরকে প্যালেস শহরও বলা যায়। প্রথমে মাইসোর প্যালেসের (Mysore Palace) কথাই বলি। দিনটি ছিল ছুটির দিন, তাই হৈমন্তীদিও আমাদের সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ল মাইসোর প্যালেস দর্শনে।
অপূর্ব সুন্দর এই প্যালেসের গঠনশৈলী Indo-Saracenic। এক বিশেষ আর্কিটেকচার যেখানে গথিক, হিন্দু, মুসলিম, রাজপুত স্টাইলের সংমিশ্রণ ঘটেছে। অপূর্ব এই প্রাসাদ অতীতের Wadiyar রাজাদের জীবনযাত্রার এক ঐতিহাসিক দলিল। মূল্যবান হাতির দাঁতের অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ প্রতিটি দরজায়, দেওয়ালে। গায়ে গায়ে ইতিহাস ও প্রচুর ঐশ্বর্য নিয়ে প্রাসাদটি প্রচুর মানুষকে স্বাগত জানায়। তবে, ভেতরে ফটো তোলা নিষেধ। একটু খারাপ লাগে, এতো সুন্দর এক প্রাসাদের অন্দরমহলের দৃশ্য পৃথিবীর কাছে অদেখাই থেকে যাবে। শুনেছি দশেরার সময় মাইসোরের এই প্যালেস আলোর মালায় সাজানো হয়। পরের বারের জন্যে তুলে রাখা রইল।
প্রাসাদের অন্দরমহলে ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়িয়ে এসে প্রত্যেকে কর্ণাটক সরকারের হ্যান্ডলুম ‘কাবেরী’তে একবার ঢুকবেই। নানান রকম স্যুভেনির, চন্দন কাঠের তৈরি ছোট মূর্তি, ধুপকাঠি নেড়েচেড়ে কেনা ও দেখাও যেন বেড়ানোরই অঙ্গ।
আমাদের গাইড এবার বিষ্ণু মন্দিরে নিয়ে এলো। অপূর্ব স্থাপত্যে তৈরি এই মন্দিরের দালান দেখে আশ্চর্য হই। মন্দিরের গায়ে পাথর কেটে তৈরি অপূর্ব মূর্তি গুলো হাজার বছরের ইতিহাস বহন করেছে।
এবার আমাদের উদ্দ্যেশ্য চামুণ্ডা পাহাড়ের উপরে চামুন্ডেশ্বরী মন্দির। মাইসোরের মহারাজরা দুর্গার চামুণ্ডা রূপের উপাসনা করতেন। ১২ শতকে তৈরি এই মন্দিরে আজও পুজা হয়। চামুণ্ডা পাহাড়কে সহজেই চেনা যায় নন্দীর বিশাল মূর্তি দেখে। চামুণ্ডা পাহাড়ের পথে উপর থেকে মাইসোরের দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আমরা নেমে যাই।
ডিসেম্বর মাস, অথচ ঠাণ্ডার ছিটেফোঁটা নেই। তবে গরমও খুব নেই, মাইসোরে এই সময়ে এক আরামদায়ক আবহাওয়া। ঘুরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে আসে। এবার ফিরে যাই, রাতে হৈমন্তীদির সঙ্গে নতুন পুরনো সব দিনের গল্প জমে ওঠে। কাল আবার মাইসোরের বাকি অংশ দেখতে হবে।
Stunning pictures of this magnificent city ,India the mysterious country yet so beautiful..Best regards.jalal
Thank you for the comment. Yes you are right, there are perhaps very few nations in the world with the enormous variety and diversity that India has to offer. I quote Romain Rolland, a French scholar : “If there is one place on the face of earth where all the dreams of living men have found a home from the very earliest days when man began the dream of existence, it is India.” Best regards. S.Chowdhury