পর্তুগালের ভিয়েনা দো কাস্তেলোয় কয়েকদিন- ২ (Viana do Castelo, Portugal)

পরেরদিন এই শহরের দ্রষ্ট্যব্য স্থান দেখতে সকালেই বেড়িয়ে পড়লাম। ছোট্ট শান্ত এই মফঃস্বলের মানুষ জন বেশ ভালো, রাস্তায় দেখা হলে মিষ্টি হাসে। ছোট্ট এই মফঃস্বল শহর হেঁটেই দেখা যায়, তাছাড়া শহরের ভেতর কিছু জায়গা তো শুধু হাঁটার জন্যেই। অবশ্য ট্যুরিজম অফিসে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা এখানে বেশ কয়েকদিন থাকব, তাই ঠিক করলাম পরে একদিন সাইকেল নিয়ে ঘুরবো।

হাঁটতে হাঁটতে একমুঠো এই শহরটি দেখি, সুন্দর পাবলিক স্কোয়ারের চারদিকে প্রচুর রেস্টুরেন্ট। ছোট মিউজিয়াম, চার্চ, শহরের মূল স্কোয়ার সব নিয়ে এই মফঃস্বল শহরটি স্বয়ং সম্পূর্ণ। ছোট্ট মিউজিয়ামে এই শহরের ইতিহাস সযত্নে রক্ষিত। ইউরোপে দেখেছি যতই ছোট শহর হোক না কেন, শহরটির এক মিউজিয়াম থাকেই। নিজের অস্ত্বিত্ব সমন্ধে খুবই সচেতন ইউরোপিয়ানরা। এই সমুদ্র শহরে মানুষ মুলত বেড়াতেই আসে তাই এই শহরের মানুষ লঘু ছন্দে চলে।

শহরে চলতে ফিরতে, দূরে Mt. St. Luzia পাহাড়ের উপরে Basilica of Santa Luzia দেখা যায়। প্যারিসের Sacré Coeur de Montmartre এর অনুকরণে তৈরি এই বাসিলিকা থেকে ভিয়েনা দো কাস্তেলো শহরের ও সমুদ্রের অপূর্ব দৃশ্যে বাগরুদ্ধ হয়ে যায়। লিফটে করে বা সিঁড়ি বেয়ে এই বেসিলিকার এক দম চূড়ায় ওঠা যায়।

আসলে এই শহরের এক প্রাসাদ Castelo de Santiago da Barra তে আমাদের এক কনফারেন্স আছে তাই এই শান্ত শহরে কিছুদিন আমাদের থাকতে হবে। বিকেলের দিকে অন্য আরেক প্রাসাদ ‘Convento de São Domingos’ এ পর্তুগালের বিখ্যাত পোর্টও green wine বা Vinho Verde টেস্টিং দিয়ে কনফারেন্সের অভ্যর্থনা শুরু হল। Vinho Verde পর্তুগালের Minho provinceঅঞ্চলের বিখ্যাত ওয়াইন। প্রাসাদের বিশাল খোলা চত্তরে নানান প্রজাতির পর্তুগীজ Vinho Verde এর সমারোহ। শুধু যে ওয়াইন সাজানো তা নয়, কোন ওয়াইন কোন আঙুর থেকে তৈরি সেই আঙ্গুর ভর্তি ঝুড়ি ওয়াইন বোতলের পাশে পাশে রাখা। নানা দেশের মানুষ জমায়েত হয়েছে এই কনফারেন্স উপলক্ষ্যে, হাতের ওয়াইন গ্লাসে হালকা চুমুক দিতে দিতে কথায় কথায় বিকেল কোথা দিয়ে শেষ হয়ে যায়।

পরেরদিন থেকে কনফারেন্স শুরু হবে। কনফারেন্সের আসল জায়গা Castelo de Santiago da Barra এক বহুমাত্রিক স্থ্যাপত্য। এই প্রাসাদ ১৫ শতাব্দীর পর্তুগীজ রাজা D. Filipe I এর আমলে তৈরি। পরে ১৭ শতাব্দীতে জলদস্যুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে এই দুর্গের আকার আরও বড় করা হয়। বর্তমানে এই প্রাসাদ বিশেষ কনফারেন্স ইত্যাদির জন্যে।

প্রতি শুক্রবার এই প্রাসাদ ঘিরে বিশাল হাট বসে। বাজারে কি নেই, হাতে তৈরি মাটির বাসন থেকে শুরু করে, ঘর সাজানোর জিনিষ, খাবার দাবার, কাপড়, স্থানীয় গহনা সবই আছে।

পর্তুগালের ভিয়েনা দো কাস্তেলোর কথা বলতে গিয়ে এখানকার খাওয়া দাওয়ার কথা না বললে যে খুবই অন্যায় হবে। পর্তুগীজরা মনে হয় খেতে ভালোবাসে। এখানে যেমন টাটকা মাছ তেমন সুস্বাদু পর্তুগীজ রান্না। পর্তুগীজ রান্নায় যেন একটু ভারতবর্ষের মশলার প্রভাব আছে। কালে (Kale) দিয়ে তৈরি সবুজ স্যুপের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

প্রতিদিন এক এক রকম মাছের স্বাদে আমাদের রসনা তৃপ্ত হত। বিশাল প্লেটে পর্যাপ্ত টাটকা সারদিন মাছ ভাজা পরিবেশন করে – একা খেয়ে শেষ করা যায় না। কোনদিন গ্রিল্ড স্যালমন মাছ, কোনদিন গ্রিল্ড সারদিন, কোনোদিন বা ম্যাকারেল মাছ ভাজা সঙ্গে প্রচুর সবজি সেদ্ধ আর আলুভাজা দিয়ে সাজিয়ে দারুন ভাবে পরিবেশন করতো। সঙ্গে অবশ্যই ছোট্ট ঝুড়িতে করে পর্তুগীজ ব্রেড।

দল বেঁধে রেস্টুরেন্ট গুলোয় হানা দিতে দিতে ওরা আমাদের চিনেই গিয়েছিল। যাওয়া মাত্র মিষ্টি হেসে ব্রেডের টুকরোর ঝুড়ি নিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে অর্ডার নিত। দুপুরে খেতে গেলে মিষ্টি হেসে বলে দেয় আজকে কোন টাটকা মাছের মেনু তৈরি হয়েছে। সুন্দর সাজানো রেস্টুরেন্টে বসেই মন ফুরফুরে হয়, খিদে চনমনে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Travel and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s