July 2012, Viana do Castelo, Portugal
কোন এক ছোট্ট পাহাড়, নীল সমুদ্র আর নদী ঘেরা শান্ত নির্জন শহর শুনলেই মনে ছুটির ঘণ্টা বাজে। মন চায় সব কাজ ফেলে চলে যেতে সেই নীল সাগর পাড়ের ছোট্ট শহরে যেখানে ‘শৈল চুড়ায় নীড় বেঁধেছে সাগর বিহঙ্গেরা’।
তেমনি এক ছোট্ট শহর উত্তর পর্তুগালের ভিয়েনা দো কাস্তেলো, বলা যেতে পারে পাহাড়, নীল সমুদ্র আর মানুষের সহজ সরল জীবন যাত্রার এক শান্ত দলিল এই ভিয়েনা দো কাস্তেলো। প্রকৃতির রমণীয় সবুজ অরণ্য ও সমুদ্রের পুরুষালি নীল রঙ যেন এই জায়গার ছবি এঁকেছে।
এখানে লিমা নদী আটলান্টিক মহাসাগরে মিশেছে, এই শহরের সঙ্গে পর্তুগালের প্রায় সব বড় শহরের ট্রেনে বা বাসে যোগাযোগ আছে, আমরা এসেছি পরতো থেকে ট্রেনে। ট্রেনে মাত্র এক ঘণ্টা দশ মিনিট লাগে এখানে পৌঁছতে।
যা বলছিলাম, সাগর বিহঙ্গের কথা শুনতে যতটা ভাল লাগে বাস্তবে মনে হয় ততটা নয়, এখানে আসার পর থেকে সিগালের চিৎকার সর্বক্ষণের সঙ্গী। হ্যাঁ, সিগালের ডাক না বলে চিৎকারই বলব। কখনও ওরা নবজাতকের কান্নার মত চিৎকার করে, কখনও বা হুলো বেড়ালের ঝগড়ার মতো শোনায় ওদের ডাক। শহরের গলিতে মাছের ব্যবসায়ীরা এখানে ঠেলায় করে সকালে মাছ বিক্রি করে, বিশেষ করে সারডিন মাছ, সেই মাছের ঠেলাতেও দেখছি সিগালেরা দল বেঁধে আক্রমণ করছে, মানুষকে ভয়ের কোন লক্ষণ ওদের মধ্যে দেখা যায় না।
ইউরোপের অন্যান্য শহরের থেকে ভিয়েনা দো কাস্তেলোকে আলাদা করেছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তার প্রাকৃতিক অবস্থান, শোনা যায় রোমানেরা এখানে এসে এখানের লিমা নদী , পাহাড় আর সমুদ্রের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে স্বর্গের নদী বলে ভুল করেছিল, সেই নদী যে নদীর জলের ছোঁয়ায় মানুষের পূর্বজন্মের সব কথা ভুলে যায়। কিন্তু, ওদের মধ্যে একজন সাহস করে নদী পার হয়ে গিয়ে ওপাড় থেকে সবার নাম ধরে ডাকে, প্রমান করে যে এ স্বর্গ নয় মর্তেরই রূপ, সে ওদের কারোর নাম ভোলে নি।
এই শহরে আমরা পৌঁছেছি প্রায় সন্ধ্যের দিকে, সন্ধ্যা শুধু আমাদের ঘড়িতে, আর আমাদের খিদেতে। আটটা বাজে প্রায়, সূর্য এখনও মধ্য আকাশে। সামারে এখানে সন্ধ্যার আঁধার নামে প্রায় সারে দশটায়। আমরা গুটিকয় যাত্রী এই স্টেশনে নামলাম, নির্জন ষ্টেশন চত্তর। খুব একটা লোকজন চোখে পড়ছে না, শুধু দু’ তিনটে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে, এমনকি সমস্ত দোকান পাট বন্ধ, সাধারণত ইউরোপের অন্যান্য শহরে এত তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ হতে দেখিনি।
এই শহর খুবই নির্জন, শান্ত, আর ঘুমন্ত। আমাদের হোটেল আগেই বুক করা ছিল আর হোটেলে যাওয়ার রাস্তা আমরা আমাদের জি পি এস মোবাইলে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছি আর পথ ধরে হাঁটছি, ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনে এসেছি যে হোটেল রেল ষ্টেশন থেকে খুব বেশি দূরে নয় মাত্র দু’কিলোমিটার। এখানে মসৃণ রাস্তায় দু’ কিলোমিটার হাঁটা খুব কঠিন নয়। পৌঁছে গেলাম হোটেলে। কাল নতুন জায়গা ঘুরে দেখবো।