September 2013, Split, Croatia
শুনেছি মানুষ এখানে আজও হাজার বছরের পুরনো রোমান প্রাসাদে থাকে। এখানের মানুষের শিকড় ছড়ানো গহন অতীতে।
আধুনিক এই ছোট্ট শহরে আজও রোমান প্রাসাদের বারান্দায় কফির আসর বসে, হয় বেচাকেনা। রোমান প্রাসাদের প্রধান চত্তর peristyle এ চলে নাচের আসর। রোমানদের আর্কিটেকচার ও ইঞ্জিনিয়ারিং এখানে এখনো অসাধারণ। হাজার বছরের পুরনো এই প্রাসাদের মাটির নিচে বিশাল বিশাল থাম দিয়ে তখনকার সময়েই বেসমেন্ট তৈরি হয়েছিল – দেখেই রোমানদের অসাধারণ শক্তির ধারণা হয়। আজও সেখানে বাজার বসে।
এই শহরের সাদা পাথরে বাঁধানো গলি, আসলে রোমান প্রাসাদের করিডোর ধরে হেঁটে হেঁটেই স্প্লিট শহরকে আবিষ্কার করা যায়। এই প্রাসাদে ঢোকার চারটে পথ আছে, কোন একটা পথ ধরে ঢুকে গেলেই ধীরে ধীরে প্রাসাদ ঘুরে দেখা যায়।
ডালমাশিয়ায় রাজত্বের জন্যে রোমান সম্রাট Diocletian সমুদ্রের দিকে মুখ করে স্প্লিটে এই প্রাসাদ তৈরি করেন। আজকের পৃথিবীতে বোধহয় একমাত্র এই রোমান প্রাসাদই আজকের মানুষের প্রতিদিনের ব্যবসা-বানিজ্য, প্রতিদিনের বাঁচা বাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
এখানে রোমান প্রাসাদের মূল চত্তর peristyle এ ঠিক বারোটার সময়ে স্থানীয় পুরুষেরা রোমান যোদ্ধার পোশাক পড়ে নাকাড়া বাজিয়ে অভিনয় করে। আমরা ঠিক জানতাম না, প্রাসাদের গলিতে ঘুরে যখন peristyle চত্তরে পৌঁছলাম, দেখি প্রচণ্ড ভিড়, প্রাসাদের বারান্দার দিকে মুখ করে সবাই স্থির দাঁড়িয়ে । অকারনে তো এভাবে কেউ দাঁড়াবে না, আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। একটু পরেই শুরু হল রোমান যোদ্ধার অভিনয়।
এই peristyle চত্তরে ইজিপ্টের আসল sphinxes আছে, সম্রাট Diocletian মিশর থেকে এনেছিলেন এই মূর্তি।
এখানে এই রোমান প্রাসাদের গা ঘেঁসেই স্থানীয় মানুষের বাড়ী, প্রাসাদের গলির দু’পাশে যে বাড়ীগুলো বা দোকান সবই একদা রোমান প্রাসাদই ছিল। তাই বলা যায় এখানে আজকের আধুনিক মানুষ রোমান প্রাসাদে বাস করে। এখানে ঐতিহাসিক অতীত ও আধুনিক বর্তমানে কোন বিরোধ নেই।
রোমান প্রাসাদের গলি ঘুরে, নানান চত্তর ঘুরে চলে এলাম Riva promenade, দুপুর গড়িয়ে গেছে বহু আগেই, Riva promenade এ চলার পথে চোখে পড়ে সবুজ পাহাড় – Marjan Hill, স্প্লিটের ফুসফুস। ঐ পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের পাশে স্প্লিট শহরের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। আমরা যেখানে থাকছি Marjan Hill খুব কাছে, হেঁটেই যাওয়া যায়। এই পাহাড়ের সবুজ বাঁচানোর জন্যে এখানে বাড়ী তৈরি নিষেধ। স্থানীয় মানুষের দৌড়নোর, হাঁটার জায়গা। পাহাড়ের ঠিক উপরেই আছে এক ক্যাফেটেরিয়া , কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে স্প্লিটের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
একটা দিনের শেষে এই শহরের সাধারণ ছোট ছোট সুখের ছবি দেখতে দেখতে ফিরে আসার সময় হয়ে যায়। এবারের উদ্দ্যেশ্য Plitvička jezera।