April 2010, Pisa, Tuscan, Italy
Under the Tuscan sun সিনেমাটা দেখেছিলাম বহু আগে। শুধু ছবি দেখেই মধ্য ইতালির এই তুস্কানি প্রকৃতির প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু এই তুস্কানি এলাকায় কখনো যে আসা হবে তা আগে ভাবিনি। শিল্পীর প্রেরণা এই তুস্কানি প্রকৃতি।
দিগন্তের সীমা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা উঁচু নিচু সবুজ, হলুদ জমি মাঝে মাঝে সূচলো ঝাউ গাছের সারি। দূরে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ী এক অপূর্ব ছবি তৈরি করে। এই ছবি যেন মনকে আরও বেশী ভ্রমনপিয়াসি করে। এই তুস্কান এলাকা ইউরোপের বহু বিখ্যাত মানুষ যারা রেনেসান্স পিরিয়ডে শিল্প ও বিজ্ঞানের দুনিয়ায় সারা ফেলেছেন তাঁদের জন্মস্থান।
ঐতিহাসিক দিক দিয়ে, শিল্প ও সংস্কৃতিতে এই তুস্কান এলাকা এতোই সম্বৃদ্ধ যে সাতটি World Heritage Site এখানে আছে। পিসার ক্যাথিড্রাল স্কোয়ার তার মধ্যে অন্যতম।
এপ্রিলের আলো ঝলমলে দিনে তুলুস থেকে দুপুরেই পিসা পৌঁছে গিয়েছিলাম। Piazza del Duomo যার অন্য নাম Piazza dei Miracoli (“Square of Miracles”) এর সামনে প্রচুর ভিড়। Piazza del Duomo র মধ্যে আছে ক্যাথিড্রাল। এই ক্যাথিড্রালের প্রতিটি থাম, দরজা সুক্ষ কারুকাজে ভরা।
পিসার এই স্কোয়ারে, পিসার হেলানো টাওয়ারের সামনে প্রচুর ভিড়। এই বেল টাওয়ার নাকি তৈরির সময় থেকেই ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছিল, এবং দিনে দিনে সেই ঝুঁকে পড়া বেড়েই চলেছিল। ২০ ও ২১ শতকে এই হেলানো টাওয়ারকে কিছুটা সোজা করার চেষ্টা করা হয়। এখানে এসে সবাই ছেলেবেলায় দেখা বিজ্ঞান বইয়ে Galileo Galilei র সেই বিখ্যাত বল ফেলার ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় মিত্র শক্তির কাছে খবর গেল জার্মান সেনারা নাকি পিসার হেলানো টাওয়ারকে observation post হিসাবে ব্যবহার করছে এবং এক U.S. Army sergeant কে পাঠানো হয়েছিল এই খবরের সত্যতা বিচার করার জন্যে। সেই U.S. Army sergeant এখানে এসে এই স্কোয়ার ও টাওয়ারের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল, এবং আক্রমণ করা থেকে বিরত ছিল। এই স্কোয়ার তাই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ছায়া থেকে বেঁচে যায়।
সবাই ব্যস্ত ফটো তুলতে। প্রায় সবাই হেলানো টাওয়ারকে সোজা করার জন্যে হেলে যাওয়া দিকে ঠেলা দেওয়ার পোজ দেয়। এই স্কোয়ারের এক বিশেষ জায়গা থেকে দেখলে পিসার হেলানো টাওয়ারকে সোজা বলে মনে হয়।
বেলা শেষের আলো ছড়িয়ে পড়েছে সাদা পাথরের তৈরি ক্যাথিড্রাল ও টাওয়ারের উপরে। এক অদ্ভুত সুন্দর ছবি তৈরি হয়েছে। কয়েকশো বছর পুরনো এই স্থাপত্য কত রোদ-বৃষ্টি সহ্য করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের সৃষ্টি থেকেই যায়।