এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন – আট

বড়গল্প – সাত

ফিলিপ কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভেবে, কফির কাপে আবার চুমুক দিয়ে বলল – খুব খারাপ লাগে, যখন দেখি অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ গুলি উদ্ধার করে কবর দেওয়া হয়। ওদের আত্মীয় স্বজন তো কখনোই ওদের মৃত্যুর কথা জানতে পারে না ।

কখনো কখনো আবার ওদের ধরে ধরে গ্রিসের ফালকুটা গ্রামে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। হয়তো, কেউ কেউ সেখানে বছরের পর বছর থেকে যায় – শুধু গ্রীক সরকারের তরফ থেকে এক টুকরো কাগজের আশায় – যে কাগজে লোকটির পরিচয় লেখা থাকবে। প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে করে ওদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন প্রায় দু’শো মানুষ গ্রিস তুর্কী সীমান্ত পেড়িয়ে হেঁটে হেঁটে চলে আসে ইউরোপে। এরা দিনে পঞ্চাশ কিলোমিটারের উপর হাঁটে। ভাবো খাবার নেই, জল নেই – এই দীর্ঘ রাস্তা এরা হেঁটে পার করে দেয়। ওদের মানসিক ভারসাম্য হারাবে না তো কার হারাবে?

শার্লট বলল – আচ্ছা, ওদের কি পুলিশ মারে? লোকটার গায়ে দেখেছি অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।

ফিলিপ একবার নিজের ঠোঁট দু’টো চেপে বলল – নাঃ, পুলিশ কখনোই ওদের মারে না, গায়ে হাত দেয় না। পুলিশ জানে ওরা অর্থনৈতিক অনুপ্রবেশকারী। মাঝে মাঝে পুলিশ শুধু কুকুর ছেড়ে দেয় ওদের পিছনে। শুধু ছোটায়, ভয় দেখায়। আমাদের অর্থনৈতিক অনুপ্রবেশকারীদের উপরে গুলি চালানো একদম নিষেধ। হিউম্যান রাইটস।

আসলে, ওদের কাছে তো ইউরোপে ঢোকার কোন বৈধ কাগজ পত্র থাকে না, ওরা এজেন্টদের ধরে, ওদের প্রচুর টাকা দিয়ে, তবে ইউরোপে আসে। এজেন্টরাই ওদের বলে দেয় – নিজেদের আঘাত করতে। ওরা যখন নিজেরা নিজেকে আঘাত করে আহত হয়, হাসপাতালে ভর্তি হয়, হাসপাতালের খাতায় নকল নাম লেখায়। হাসপাতাল ওদের নকল নামের পরিচয়ের কাগজ দেয়, সেই কাগজ ওরা জায়গায় জায়গায় ব্যবহার করে। বেশীর ভাগ সময়ে ওরা নিজেদেরকে ক্রিস্টান পরিচয় দিতে পছন্দ করে। হয়তো ভাবে ইউরোপ ক্রিস্টানদের উপরে সদয়।

ওদের এজেন্টদের এমন শয়তানি বুদ্ধি, যে ঐ সামান্য কাগজ থেকে নকল পরিচয় পত্র বানিয়ে নেয়। ওদের এক এক জনের প্রায় চার পাঁচটা করে পরিচয়, নানান দেশে যখন যেটা দরকার সেটা ব্যবহার করে। ওরা হয়তো নিজেও অনেক সময় ভুলে যায় নিজের পরিচয়। শুধু, কোন রকমে ওরা নিজেদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী প্রমান করে ছাড়ে। অথচ, বেশীরভাগ সময় ওরা অর্থনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী। এই দেশে চলে আসে, কম পয়সায় কাজ করে, অমানুষিক খেটে রোজগার করে, না পারলে ছোটখাটো চুরিও করতে দ্বিধা করে না।

ফিলিপ আবার বলল – জানো তো, পৃথিবীর চেহারা খুব বেশী একটা পাল্টায় নি, আগে কৃতদাসের ব্যবসা হত, জাহাজের খোলের মধ্যে করে কৃতদাসদের নিয়ে আসা হত, অমানুষিক কাজ করানো হত, কেউ কেউ হয়তো পথে মারাও যেত। এখন মানুষ স্বেচ্ছায় কৃতদাস হতে আসে। এইসব মানুষদের কি ভাবে এজেন্টরা ইউরোপে পাচার করে, জানো?

শার্লট মাথা নাড়ল – না।

সত্যিই শার্লট এই বিষয়ে কিছুই জানে না। এতোই অন্যরকম জগতের কথা, সে শার্লটের মতো এক সাধারণ ফরাসী মেয়ের জানার কথাও তো নয়।

ফিলিপ জবাব দিল – বন্ধ মালবহনকারী ট্রাকে। নানা আকারের বন্ধ ট্রাক সীমান্ত এলাকায় মাল বহন করে। বুলগেরিয়া থেকে বন্ধ ট্রাকে করে চলে আসে অ্যালবেনিয়া, অ্যালবেনিয়া থেকে বন্ধ ট্রাক বা ট্যাংকারে করে চলে যায় ইতালি বা গ্রীস।’

শার্লট চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল – ও মাই গড! বন্ধ ট্রাকে কি করে থাকে দম বন্ধ হয়ে যায় না?

চলবে

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Fiction. Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s