এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – সাত)

এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – ছয় )

 

ফিলিপ বলল – লোকটা নিশ্চয় পূর্ব ইউরোপ বা এশিয়ার লোক। এইদিকে চলে এসেছে ভালো জীবনযাত্রার সন্ধানে। এখন ইউরোপে নানান দেশের অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ছে। কেউ বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী।  আবার কেউ অর্থনৈতিক সাহায্য প্রার্থী। মোটকথা গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপে যেন এই ধরণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীর ঢল নেমেছে। নানান চোরা পথে সীমান্ত পেড়িয়ে কোন রকমে ইউরোপের মাটিতে চলে আসছে ওরা। এতো বড় জল এবং স্থল সীমান্ত আমাদের – প্রতিদিনই কোন না কোন পথ ধরে চলে আসছে ওরা। সবচেয়ে বেশী অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা ভোগ করছে গ্রীস। গ্রিসের পাশেই অ্যালবেনিয়া আর তুর্কী। তুর্কী হয়ে আফগানিস্থান, ইরান, ইরাক, কাজাকিস্থান, পাকিস্থান, ভারত, চীন, বাংলাদেশ এই সমস্ত দেশের অনুপ্রবেশকারীরা চলে আসছে।

শার্লট জিজ্ঞেস করল – কেন আসছে ওরা?

ইউরোপে এক ভালো জীবন যাপনের উদ্দ্যেশে আসছে। এক আর্থিক সুস্থ জীবনের সন্ধানে ওরা পাড়ি দিয়েছে অনেক দুর্গম রাস্তা। অনেকে আবার জলপথ ধরেও আসে। অনেকে লিবিয়া, তুনিসিয়া থেকে ছোট্ট নৌকো নিয়ে অবৈধ ভাবে জলপথে মেডিটেরিয়ান সমুদ্র পার হয়ে চলে আসে ইতালির লাম্ফেডুসা দ্বীপে। লাম্পেডুসা দ্বীপটি, মাল্টা ও তুনিসিয়ার মধ্যে ইতালির অধীনে এক দ্বীপ। কখনো কখনো মেডিটেরিয়ানের ভয়ংকর জলরাশিতে অনেকে মৃত্যু বরণও করে। কেউ কেউ আবার ইতালি বা গ্রিসের জল সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে সমুদ্রেও ঝাঁপ দেয়। মেডিটেরিয়ানের হিম শীতল জলে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কেউ মারা যায় আবার কেউ কোনরকমে সাঁতার কেটে নৌকো ধরে জলে ভাসতে থাকে। জলরক্ষীর নৌকো চলে গেলে আবার উঠে বসে নিজেদের নৌকোতে। কেউ কেউ তো আর উঠে আসে না, তাঁদের সলিল সমাধি ঘটে – জলের হাঙ্গরের খাদ্য হয় তারা। ঐসব ছোট ছোট নৌকো গুলোতেও আবার জায়গা নিয়ে ওদের মধ্যে ভীষণ মারামারি হয় – এমনকি, জলেও ফেলে দেয়। পৃথিবীটা বড়ই কঠিন শার্লট। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি ওদের দুর্দশা। প্রতিদিন কতজনকে যে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হয় আমাদের। – ফিলিপ বলল।

শার্লট মাথায় হাত দিয়ে ধৈর্য সহকারে শুনল সব কথা।

শার্লট নিজের কাজ ও দুনিয়া নিয়ে মগ্ন আগাগোড়া এক ফরাসী নারী। কখনোই তৃতীয় পৃথিবী নামে আরেক পৃথিবীর খোঁজ রাখে নি, এই ধরণের সমস্যার কথা এতো মন দিয়ে কখনোই শোণে নি। তৃতীয় পৃথিবীর বাসিন্দারা যে আজ কড়া নাড়ছে ওদের দরজায়। বন্ধ দরজার এপাশে থেকে নিজেকে বড় বেশী সুরক্ষিত মনে হয়েছিল – ওদের কড়া নাড়ার আওয়াজ যায় নি কানে, কখনোই চাক্ষুষ পরিচয় হয় নি কোন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে। শার্লটের মনে হল যেমন করেই হোক ঐ লোকটার সঙ্গে কথা বলতে হবে – জানতে হবে ওর কাহিনী।

চলবে

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Fiction and tagged , . Bookmark the permalink.

2 Responses to এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – সাত)

  1. Hridoy rahman বলেছেন:

    দুর্দান্ত হচ্ছে! চালিয়ে যান..

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s