কি আশ্চর্য, শরৎ কাল এলে ফ্রান্সের প্রকৃতিও বুঝি বা কাশ ফুল ফুটিয়ে দিয়ে আকাশটাকে ঝকঝকে করে ঘষে মেজে নীল করে দিয়ে, মাঝে মাঝে কয়েক টুকরো সাদা তুলোর কুশন ছড়িয়ে দিয়ে মায়ের আগমনের জন্যে অপেক্ষা করে? কি জানি – অন্তত তুলুসের ক্যানাল দু মিদির ধারে ফুটে থাকা এক গুচ্ছ সাদা ঘাস ফুল দেখে তো তাই মনে হয়।
আর, ঐ এক গুচ্ছ কাশ ফুলের মতো দেখতে ফুল গুলো বড়ই স্মৃতিমেদুর করে দেয়। আমাদের ছেলেবেলায় ক্যালেন্ডার যত না জানান দিত পুজো আসছে – তার চেয়ে বেশী জানান দিয়ে যেত প্রকৃতি। প্রকৃতিতে মায়ের আগমনের কতো ইঙ্গিতই না ছড়িয়ে থাকতো আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ে – সে সকালে সবুজ ঘাসের ডগায় শিশিরের আটকে থাকা থেকে শুরু করে শিউলির মাতাল করা মিষ্টি এক সুগন্ধ হোক বা ঝরে যাওয়া শিউলি ফুলের সৌন্দর্যই হোক, বা নদীর তীরে চাষের জমিতে ভরা ফসল ও কাশ ফুল ফুটে থাকা, কিংবা ঋতু বদলের সময়ের এক ঘুষঘুষে জ্বর, কাশি – সব কিছুই যেন বলে দিত – দুর্গা পূজার আর বেশী দিন নেই।
তারপর তো একটু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোর গন্ধে আরও এক গন্ধ জুড়ে গিয়েছিল – নতুন পূজা সংখ্যা গুলোর কড়কড়ে নতুন এক গন্ধ।
জীবনে অনেক কিছুই বদলে যায়, মানুষের মুখ ও অনুভূতি গুলোও বদলে বদলে যায়, বদল হয় জায়গা, সময় – প্রতি বছর পুজো আসে। কিন্তু, বিশেষ এই সময়ের রোদের ফিকে হলুদ রং, তার দীর্ঘ ছায়া, নীল আকাশ, হঠাৎ বৃষ্টি – এই সব যেন কিছুতেই বদলাতে জানে না – অন্তত আমার দেখা পৃথিবীর এই কোণটিতে তো দেখি প্রকৃতি দিব্যি পরিপাটি করে সেজে গুজে নিয়ে তৈরি।
এই সময়টা যেন প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে পৃথিবীর সবাইকে ভালো রাখার অঙ্গীকার করে। জলের ধারের কাশ ফুলেরা হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে যেন সেই অঙ্গীকারে সায় দিয়ে যায় – আর এই রঙিন প্রকৃতির অপরূপ রূপের সাক্ষী হয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে হয়। ভালো লাগে।