সামারের শুরুতেই স্থানীয় ফরাসী বাজারে উল্লেখযোগ্য ভাবে রসুনের উপস্থিতি দেখে আশ্চর্য হতে হয় – নানা রঙের – গোলাপি, বেগুনি, সাদা, সবুজ ও হলুদ রঙের বড় বড় রসুনে বাজার ভরে যায়। বিশেষ এই সময়ে টাটকা তাজা থেকে শুরু করে স্মোকড রসুন দেখা যায়। আর ফরাসীরাও কাড়ি কাড়ি রসুন কিনতে ও খেতে ভালোবাসে। ফরাসী রান্নার অন্যতম উপাদান রসুন।
যে ফরাসীরা নিজেদের পারফিউমের সুগন্ধ নিয়ে এতোই মাতোয়ারা, গর্বিত, আর এই ফরাসীরাই যে রসুনের মতো তীব্র এক ঝাঁজালো গন্ধের ঔষধিকে পছন্দ করে নিজেদের খাদ্য তালিকায় জুড়ে দিয়েছে – দেখে অনেকেই অবাক হয়। ফরাসী স্থানীয় চাষিরা রসুন গুলোকে একসঙ্গে বিনুনি বেঁধে বিক্রি করে – একটু গ্রামের দিকের বাজারে গেলে রসুনের উপস্থিতি আরও দেখা যায়।
অবশ্য শুধু ফ্রান্সেই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও দেখেছি রান্নায় রসুন খুবই ব্যবহার হয় – যেমন পর্তুগালের যে কোন রেস্টুরেন্টে স্যালমন মাছের সঙ্গে রসুন কুচি পরিবেশন করবেই – এবং সেই রসুনের পরিমাণকে বেশ যথেষ্টই বলা যায়।
যদিও রসুনের আদি বসবাস মধ্য এশিয়ায়, কিন্তু, রোমানদের হাত ধরে রসুন ইউরোপে এসেছিল। প্রাচীন ইউরোপে রসুনকে নিয়ে প্রচুর গল্প গাঁথারও প্রচলন ছিল। তারপর উনিশ শতাব্দীতে লুই পাস্তুর রসুনের এন্টিসেপ্টিক গুণ প্রমান করেছিলেন।
যাইহোক, মিদি পিরেনিস এলাকার পাহাড়ের ঢালে, গোলাপি ও বেগুনি রঙের যে রসুন উৎপাদন হয় – তুলুসের বাজারে সেই রসুনের যেমন খুবই কদর, তেমনি দাম। বড় বড় কোয়ার এই রসুন গুলোর স্বাদও একটু অন্যরকম। ফরাসীরা এই রসুন গুলোকে আস্ত আস্ত ওভেনে দিয়ে রোস্ট করে খেতেও খুব ভালোবাসে। তাছাড়া, ফরাসী খাদ্যের সঙ্গে ভিনিগার ও অলিভ ওয়েল দিয়ে রসুনের আচারও পরিবেশন করা হয়।
শোণা যায়, ইজিপ্টের পিরামিড তৈরির সময়, শ্রমিকদের রেশনে প্রতিদিন রসুন দেওয়া হতো – যাতে পিরামিড তৈরির সময় শ্রমিকদের কোন অজানা অসুখ না হয়, ওরা যাতে সুস্থ থাকে, এবং কাজ করার শক্তি পায়। সেই সময়েই রসুনের আশ্চর্য গুণের রহস্য মিশরীয়রা জেনে নিয়েছিল। তা ছাড়া, যে কোন ধরণের পোকা, মশা ইত্যাদির হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর ইতিহাস রসুনের দখলে। এমনকি, যখন তুতানখামেনের সমাধি আবিষ্কার হয়েছিল – সেই সমাধির মধ্যে প্রচুর রসুন পাওয়া গিয়েছিল।
শুধু তাই নয় – পৃথিবীর প্রায় সমস্ত প্রাচীন সভ্যতা – সে রোমান থেকে শুরু করে মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রীক, ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে রসুনের আশ্চর্য গুণের কথা পাওয়া যায়। আর দীর্ঘ সময় ধরে যে রসুন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে চলেছে, মানুষকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উপহার দিয়েছে, মানুষকে সুস্থ রেখেছে – সেই রসুনকে মানুষ খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয় কি করে?