আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণের প্রজন্ম, যারা নিজেদের চোখের সামনে খুব দ্রুত পরিবর্তন দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ম্যানুয়েল থেকে ডিজিট্যাল সন্ধিক্ষনের প্রজন্ম আমরা।
সময়কে, একটা মুহূর্তকে ধরে রাখার, বন্দী করে নেওয়ার এক তীব্র নেশা ছিল মানুষের মধ্যে। যে সময় বয়ে চলে, যে জীবন বয়ে চলে – প্রত্যেকটা মানুষের কাছে সেই সময়ের স্রোত, সেই মুহূর্ত গুলো এক অমূল্য গল্প বলে যায়। আর সেই চলমান মুহূর্তের গল্পকে ছবির মধ্যে ধরে নিতে পারাই বোধহয় সময়কে ধরে রাখার আরেক নাম।
যে সময় চলে গেছে – বর্তমানে তো সেই সময়ে কেউই বাঁচতে পারে না, কিন্তু সেই চলে যাওয়া সময় মানুষের স্মৃতি তৈরি করে দেয় – আর সেই স্মৃতিকে আরও বেশী জীবন্ত করে দেয় একটি ছবি। আর সেই জন্যেই মানুষ ছবি তুলে যেতে ভালো বাসে। আর সেই জন্যেই মনে হয়, আজ ক্যামেরা প্রায় প্র্ত্যেকটি মানুষের পকেটে জায়গা করে নিয়েছে।
বহু পুরনো, তিন চারশো বছরেরও বেশী পুরনো হতে পারে, হাতে আঁকা তেল রঙের একটা ছবির দাম কেন আঁকাশ ছোঁয়া হয় – আসলে পুরনো সেই ছবিটি সেই সময়ের মানুষের, সেই সময়ের সামাজিক এক গল্প বলে। ছবিটি নিজেই এক ইতিহাসের বিষয় হয়ে যায়। সেই হাতে আঁকা তেল রঙের ছবি থেকে ডিজিটাল ছবি যুগের যাত্রাটি কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আগে জার্মান লাইকা ক্যামেরার দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া – যা কিনা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল, তাই ছবি তোলাটা খুবই সীমিত মানুষের কাছেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, জাপানি কোম্পানি ক্যানন যখন লাইকা ক্যামেরার অনুকরণে ক্যমেরা তৈরি করে বাজারে ছাড়ল – তাও আবার লাইকা ক্যামেরার চেয়ে অনেক কম দামে, বাজারে ঐ জাপানি ক্যামেরার চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, জাপানি ক্যামেরার ব্যবসায়ে বাদ সাধল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
তাও যখন যুদ্ধে জাপান জার্মানির সঙ্গে যোগ দিল – মিত্র শক্তির সমস্ত কোপ গিয়ে পড়ল জাপানের উপরে। মিত্র শক্তির বোমার আঘাতে ক্যানন ক্যামেরার ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণ ধুলিস্যাত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, মিত্রশক্তির সেনারা যখন টোকিও দখল করে নিয়েছিল, জাপানি ঐ ক্যামেরা, লাইকার চেয়ে যা অনেক সস্তা – মিত্র শক্তির সেনাবাহিনীর মন জয় করে নিয়েছিল – সেনা বাহিনীর মধ্যে ঐ ক্যামেরার চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। আর বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্যানন ফ্যাক্টরির কর্মীরা যারা গ্রামে ফিরে গিয়েছিল – তাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসে, ক্যানন ক্যামেরার ফ্যাক্টরি চালু হয়েছিল। তারপর আর ক্যানন কোম্পানিকে পিছু ফিরে দেখতে হয় নি।
তারপর সময়ের হাত ধরে নানা ধরণের ক্যামেরা দেখা গেছে। ক্যামেরার জনপ্রিয়তাও দিনে দিনে বেড়েছে, আজ ডিজিটাল ক্যামেরায় যত ইচ্ছে সময়ের টুকরো গুলোকে ধরে রাখতে পারি, কিন্তু, যখন আন্টিক বাজারে পুরনো ক্যামেরা গুলোকে দেখি – একটু থেমে দেখি। দেখি সময়ের সঙ্গে ক্যামেরাও কতো বদলে গেছে। বদলায়, সবই তো বদলায়।