অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে হাওয়ায় শীতের মারাত্মক তীব্রতায় কোপেনহেগেনের নাইহাভন এলাকা কেমন জবুথবু, নিঝুম হয়ে আছে। ক্যানালটির দু’পাশে সতেরো ও আঠারো শতাব্দীর যে রঙিন সারিবাঁধা বাড়ীগুলো এখন দামী রেস্টুরেন্ট ও হোটেল, সবই প্রায় বন্ধ বা আধ খোলা। লোক প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।
অত্যধিক ঠাণ্ডায় রেস্টুরেন্টের খোলা জায়গায় বসার তো উপায়ই নেই – তবুও দেখি প্র্যতেকটা চেয়ারের সঙ্গে মোটা কম্বল রাখা – পা ঢেকে বসার জন্যে। আর মেঘলা দিনে দুপুর বারোটাতেই মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। প্রায় প্রতিটা পুরনো বাড়ীর বাইরে ও রেস্টুরেন্টের বাইরে জ্বলন্ত হ্যারিক্যান ঝুলিয়ে বা টেবিলের উপরে রাখা – ঐতিহাসিক বাড়ীর গায়ে সেই হ্যারিকেন গুলো বেশ সুন্দর এক পুরনো ছবি তৈরি করেছে। এছাড়া, এই হাড় হিম ঠাণ্ডায় ও ভেজা ভেজা দিনে সেই জ্বলন্ত হ্যারিকেন যেন পরিবেশে একটু উষ্ণতা এনে দেয়।
অথচ, শুনেছি গরমের সময়ে এই অঞ্চল প্রচুর মানুষের আনন্দ কোলাহলে, জ্যাজ পপ মিউজিকে, অবসর যাপনে জমজমাট হয়ে ওঠে। নাইহাভন মানে নতুন বন্দর। সতেরো শতাব্দীতে ডেনিশ ও সুইডিশ যুদ্ধের সুইডিশ যুদ্ধ বন্দীরা শহরের Kongens Nytorv বা King’s Square থেকে সমুদ্রের মধ্যে এই ক্যানাল তৈরি করেছে। এক সময় এই বন্দরে সমুদ্র গামী জাহাজ নোঙর করতো, আর দু’পাশের বাড়ী গুলোয় নাবিকদের অস্থায়ী আস্থানা, বার, আমোদ প্রমোদের জায়গা ছিল। পরে যখন সমুদ্রগামী জাহাজের আকার বড় হয়ে গেল ধীরে ধীরে এই বন্দরে জাহাজের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেল – নতুন বন্দর পরে রইল পরিত্যক্ত হয়ে।
কিন্তু, পরে জলের পাশে এই জায়গাটিই হয়ে গেল কোপেনহেগেন বাসীর এক বিনোদন কেন্দ্র, সামারের অবসর বিকেল যাপনের জায়গা। দু’পাশের বাড়ীগুলো এখন দামী হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। প্রতিটি রঙিন বাড়ির নম্বর বেশ বড় বড় করে চোখে পড়ার মতো করে লেখা – দূর থেকেই দেখা যায়। অতীতের অনেক ডেনিশ লেখক, সাহিত্যিক এই অঞ্চলেই বসবাস করতেন। বিখ্যাত ডেনিশ সাহিত্যিক Hans Christian Andersen ও এখানে জীবনের বেশ কয়েক বছর এখানে কাটিয়েছিলেন।
এখন এই বন্দর পুরনো জাহাজের এক বন্দর মিউজিয়াম। দু’ পাশে নোঙর করা প্রচুর পুরনো কাঠের জাহাজ এই অঞ্চলের পুরনো দিনের বন্দরের চরিত্রকে ধরে রেখেছে।
তাছাড়া, জল পথে কোপেনহেগেন দেখার আরেক উপায় নৌকো নিয়ে জলপথে এই ক্যানাল ভ্রমণ। অবশ্য এই ঠাণ্ডায় কেউই দেখছি না সেই দিকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ নতুন বন্দরের পথে হেঁটে, এই জায়গার পুরনো দিনের পরিবেশকে অনুভব করে, প্রচুর ছোট বড় পুরনো জাহাজের সংগ্রহ দেখে নিয়ে কোপেনহেগেন দেখার পর্ব সেরে নিতে শহরের অন্য দিকে পা বাড়াই।