শুনশান রাস্তা, পাহাড়ি রাস্তা। স্প্লিটের সিটি সেন্টার থেকে, পাথরে বাঁধানো রাস্তাটি বাঁক নিয়ে, চলে গেছে উপরের দিকে। সেই রাস্তা ধরে উপরে পৌঁছেই সমুদ্র ও শহরের এক অপূর্ব দৃশ্যের ধাক্কা।
একদম উপরে আছে এক কফি শপ। যার বারান্দায় বসে কফির কাপে চুমুক দিয়ে ডালমেশিয়ান কোস্টের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সময় হালকা হয়ে উড়ে যায়।
আর আছে এক ভিউ পয়েন্ট – যেখানে দাঁড়িয়ে পুরো স্প্লিট শহরের বিস্তারিত জীবন যাপন দেখা যায়। দূরে দেখা যায় ক্রোয়েশিয়ার আরও দুই পাহাড় শ্রেণী Mosor ও Kozjak এর নীল রেখা।
এখানে দাঁড়িয়ে স্প্লিট বন্দরের দাঁড়িয়ে থাকা বহু জাহাজ, ও তাদের আনাগোনা চোখে পড়ে – নীল সমুদ্র সুদুরের হাতছানি দেয়।
এখানে নীল মানে তো ঠিক হালকা নীল নয়!! এক ঘন নী…ই…ল – ঐ সমুদ্রের নীল রঙ দেখে আমি নীল রঙের প্রেমে পড়ে গেছিলাম। এখানে সমুদ্র ও আকাশের নীলের মধ্যে যেন এক রেষারেষি চলে – আকাশ বলে আমার নীল ঘন বেশী, সমুদ্র বলে, না আমি বেশী নীল।
এই পাহাড় পার্ক ঘন মেডিটেরিয়ান পাইন জঙ্গলের জন্যে বিখ্যাত। সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলার মাটির পথ ও জগিং করার জন্যে আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তা তৈরি করা আছে।
এখানে দিনে দুপুরেই ঘন পাইন জঙ্গলে একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে কানে তালা দেয়। স্প্লিটের এই পাহাড় পার্ক সাধারণত স্থানীয়দের হাঁটা ও জগিং করার জন্যে এক উত্তম জায়গা।
উপরে পৌঁছে, পাথরে বাঁধানো রাস্তাটি যখন শেষ হয়ে গিয়ে ঘন মেডিটেরিয়ান পাইন জঙ্গলের আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তায় গিয়ে মিশে যায়, এখানে এসে ঘন পাইন জঙ্গলের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মনেই হয় না একটু দূরেই এক আধুনিক ও ঐতিহাসিক শহরের জীবন যাপনের ছোঁয়া। সেই ঘন পাইন জঙ্গলের রাস্তায় গিয়ে দিক ভুল হতেই পারে – আর দিক ভুল মানে শহর থেকে দূরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী থাকে।
তাই, জঙ্গলের রাস্তায় যখন স্থানীয় এক ভদ্রলোককে দেখলাম জগিং সেরে ফেরার পথ ধরেছেন – আমরাও ওনাকে সিটি সেন্টারে ফেরার পথ জিজ্ঞেস করলাম। ম্যাপে রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন – কোথা থেকে এসেছেন।
বলা মাত্রই দেখি, উনি ওনার ভারত ভ্রমণের গল্প বললেন। বললেন – এই তো আমি গত সপ্তাহেই তোমাদের দেশ থেকে ফিরলাম। দেখো – আমাদের শহরকে ভালো করে দেখো।
এই পাহাড় পার্কটি নাকি খুবই পুরনো – রোমান সময়েই এই পার্ক সাধারণ মানুষের সময় কাটানোর জায়গা হিসাবে ব্যবহার হতো। বর্তমানে স্থানীয় মানুষের জীবন যাপন, সময় কাটানোর এক অঙ্গ। আর স্পিটের অপূর্ব দৃশ্যের জন্যে অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। আর আমরাও সেই মার্জান পাহাড়ে গিয়ে আকাশ নীল, ও সমুদ্র নীলের সাক্ষী হয়ে রইলাম।