বাইরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি – শীতের বৃষ্টি। এক একটি ফোঁটায় যেন শাণিত বরফের তীক্ষ্ণতা। পরিবেশে ধূসরতা। আর তখন গরম পানীয়, খাদ্য, খেলা, সঙ্গীতের সুর ও উপস্থিত মানুষের আলাপ আলোচনায় সরগরম পাবের উষ্ণতা – ইউরোপের শহরের এক অতি পরিচিত ছবি।
আসলে পাব বলতে যা বোঝায় – পাবলিক যেখানে এসে জমায়েত হয়। পাবলিক প্লেস, বা পাবলিক হাউস।
যেখানে পানীয় ও খাদ্য পাওয়া যায়, আর পাবে সাধারণত অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বেশী পাওয়া যায়, তা ছাড়া চা, কফি, দুধ, কোঁকা কোলা ইত্যাদি পানীয়ও পাওয়া যায়।
ইউরোপের প্রতিটি শহর ও গ্রামের সঙ্গে যে জায়গার ছবিটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে তা হল – পাব। স্থানীয় মানুষের মেলামেশা, আলাপ আলোচনা ও পরিচয়ের জায়গা হল – পাব।
আর ইউরোপে পাবের মধ্যে বিখ্যাত হল – আইরিশ পাব। ইউরোপের আইরিশ পাব গুলোর পরিবেশের মধ্যে আজও যেন প্রাচীন ইউরোপের ছোঁয়া আছে। গরম খাদ্য, পানীয়, আইরিশ সুর, লোক সঙ্গীত, খেলা ইত্যাদি নিয়ে আইরিশ সংস্কৃতির এক ছোট্ট নমুনা দেখতে হলে আইরিশ পাবের জুরি মেলা ভার।
ডাবলিনের আইরিশ পাবের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন কাল থেকেই, দিনের কাজের শেষে সন্ধ্যায় ব্যাবসায়ি, প্রফেসর, শিল্পী সবাই এসে জড়ো হয় আইরিশ পাবে। আর নানা ধরণের ইন্টেলেকচুয়াল আলাপ আলোচনায় সরগরম থাকে এই আইরিশ পাব গুলো।
তাই, প্রায় শতাব্দী কাল ধরে এই আইরিশ পাব গুলো আইরিশ সামাজিক সংস্কৃতির ধারক হয়ে এসেছে। আজ সারা পৃথিবীর নানান দেশের বড় শহরে আইরিশ পাব দেখা যায়।
আসলে আইরিশরা, গত কয়েক শতাব্দী জুড়ে, সবচেয়ে বেশী, পৃথিবীর নানা দিকে ছড়িয়ে গেছে। আর সঙ্গে নিয়ে গেছে, ওদের সামাজিক সংস্কৃতির অঙ্গ এই – আইরিশ পাব। আর ইউরোপের সংস্কৃতির সঙ্গেও আইরিশ পাবের সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেছে।
তাই ইউরোপের প্রায় প্রতিটি শহরে আইরিশ পাবের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর সাধারণত ইউরোপের প্রায় সব আইরিশ পাবের ডেকোরেশন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট গুলো প্রায় একই থাকে। কোন কোন টুরিস্ট কেন্দ্রিক আইরিশ পাবে স্থানীয় খাদ্যও পাওয়া যায়।
শীতের দিনে কিংবা সন্ধ্যায় ইউরোপের রাস্তায় একটু উষ্ণতা, একটু গরম পানীয় ও খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে এক টুকরো আইরিশ মুহূর্তের খোঁজে অনেকেই আইরিশ পাবে, অন্তত একবার যায়। যতটা না পানীয় কিংবা খাদ্যের টান তার চেয়েও বেশী ঐ প্রাচীন রহস্যময়, ঐতিহাসিক পরিবেশের টান। যে প্রাচীন পরিবেশে যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখ গুলো বার বার বদলে গেছে, কিন্তু, আজও যে পরিবেশে সময়ের এক বিন্দু আঁচড়ও লাগে নি।
অনেকদিন পর আপনার ব্লগ পড়লাম। ভাল লাগলো।
আশাকরি ভাল আছেন… 🙂
ধন্যবাদ। ভালো আছি। আশা করি আপনিও ভালো আছেন। ভালো থাকবেন। 🙂