ফরাসী রেস্টুরেন্ট গুলোতে দেখেছি, খাদ্যের স্বাদ যাই হোক না কেন – পরিবেশনটি ওরা চমৎকার ভাবে করতে জানে। ফরাসী খাদ্য সংস্কৃতিতে প্লেটে যেন খাদ্য পরিবেশন হয় না – এক শিল্পের নমুনা পেশ করা হয়। তা দেখেই তৃপ্তি হয়। আর ফরাসীরা প্লেটে খুব কম খাবার পরিবেশন করে – তাই খাদ্য নষ্টও কম হয়।
সেই দিক দিয়ে, পর্তুগালের রেস্টুরেন্ট গুলোতে দেখেছি, প্লেটে প্রচুর পরিমানে খাদ্য পরিবেশন করে। মাছ ভাজা মানে – সঙ্গে থাকে প্রচুর সব্জি সেদ্ধ, একটু ভাত, আলু ভাজা, বা সেদ্ধ, সুপ ইত্যাদি। পর্তুগালের রেস্টুরেন্টে প্লেটের খাবার পুরো খেয়ে শেষ করা যায় না। আর ওরা স্বাদ ঠিক রেখে, পরিবেশনের সৌন্দর্য নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না।
যাইহোক, সেবার বাড়ির কাছের ফরাসী রেস্টুরেন্টটিতে মাছের এক পদ চেখে দেখতে চেয়েছিলাম। ম্যাকারেল মাছ ও মাশরুমের এক পদ। প্লেটে যা এলো, যতই দৃষ্টি নন্দন হোক না কেন, ঝাল মশলার তীক্ষ্ণ স্বাদে অভ্যস্ত আমাদের জিহ্বা প্রথমে খুবই বিদ্রোহ করল। কিন্তু, জিহ্বার সেই ধমকানি, বিদ্রোহ অগ্রাহ্য করে ফরাসী রান্নার নতুন এই স্বাদের গভীরতাকে বোঝার চেষ্টা করতে শুরু করলাম।
নুন জলে ম্যাকারেল মাছের ফীলে সেদ্ধ করে নিয়ে গোল পাকিয়ে নেওয়া হয়েছে – মাঝে দেওয়া হয়েছে একটু আলু সেদ্ধ মাখা – মাখন, গোলমরিচ, একটু নুন ও রসুন কুচি দিয়ে আলু মাখা হয়েছিল।
আর উপরে একটি মাশরুম রাখা হয়েছে – হালকা করে ভাজা। আর উপরে মাস্টার্ড, ভিনিগারের এক সস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশে এক টুকরো তাজা রোজমেরি পাতার ডাল – ঐ তাজা রোজমেরি পাতার গন্ধটি হালকা ভাবে ধীরে ধীরে পুরো খাবারে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আর মাছের এই পদের সঙ্গে পরিবেশন করে ফরাসী ব্রেড – বাগেট ও বিশেষ ধরণের ওয়াইন – যা কিনা শুধু মাছের সঙ্গেই পরিবেশন করা হয়। আর, সব মিলে এই পদের স্বাদটিকে জাগ্রত করে তোলে – আসলে এ এক সম্মিলিত স্বাদের খেলা। হালকা এক অনুভুতি, যা কিনা ফরাসীরা অনুভব করতে খুবই ভালোবাসে।
আর আমরা? আমরা ফিরে যাই কালো জিরে ফোঁড়ন ও সর্ষে বাটা দিয়ে ম্যাকারেল মাছের ঝোল ও গরম ভাতের স্বাদে।