বুদ্ধ মন্দির ভাজে কেভস (Bhaje caves, Maharashtra)

প্রায় 2nd century BC তে, পাহাড়ের গায়ে, পাথর কেটে তৈরি বাইশটা গুহা নিয়ে প্রাচীন এই বুদ্ধ মন্দিরের গঠন হয়েছিল। পুনের কাছে, লোনাওলার পাশে, ভাজে গ্রাম থেকে প্রায় চারশো ফুট উচ্চতায় এই ঐতিহাসিক কেন্দ্রের অবস্থান। প্রাচীন এই গুহা গুলোর গায়ে ও গুহায় আজও বুদ্ধ ধর্মের নিদর্শন দেখা যায়।

পাহাড়ের গায়ে, পাথরে বাঁধানো কয়েকশোটা সিঁড়ি ধরে উপরের দিকে উঠতে উঠতে, সমতলের দৃশ্য গুলো যখন এক ছোট্ট মেয়ের খেলাঘরের ঘর বাড়ি, গাড়ি হয়ে যেতে শুরু করল, সমতল শহরের যান্ত্রিক শব্দ গুলো মিলিয়ে যেতে যেতে যখন নির্জনতায় পরিণত হতে শুরু করল, আরও উপরে ওঠার মুখে, কানে এলো মন্ত্র উচ্চারণের শব্দ -‘বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি’।

নির্জনতার গাম্ভীর্যকে সেই মন্ত্র উচ্চারণ যেন মৃদু ভাবে স্পর্শ করছিল – আর জঙ্গল পাহাড়ের সেই নির্জনতা ও ‘বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি’, দুইয়ে মিলে এক ঝংকার সৃষ্টি করেছিল।

অক্টোবরের বৃষ্টির শেষ, তাই পশ্চিম ঘাটের পাহাড় সবুজ চাদরে ঢাকা – এই অঞ্চল বৃষ্টির পরেই যেন সেজে ওঠে। পাহাড়ের গায়ের ঝর্নারা নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে। পশ্চিমঘাট জঙ্গলের ঘন সবুজ, খাড়া পাহাড়, মন্ত্র উচ্চারণ, নির্জনতা – সব মিলে মিশে এক অদ্ভুত একাকী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

উপরে পৌঁছে হাজার বছর আগের এক ঐতিহাসিক নিদর্শনের মুখোমুখি হতে হয়। গুহা গুলোর স্তম্ভের গায়ে হাজার বছর আগে খোদাই করা মূর্তি গুলোর অবয়ব, হাজার বছরের ঝড়, জল, বৃষ্টি, হাওয়া, আবহাওয়াকে সহ্য করে আজও অদ্ভুতভাবে অনেকটাই অক্ষত আছে।

এই বুদ্ধ মন্দিরের পাথুরে দেওয়ালের গায়ে খোদাই করা লিপি ও মূর্তি গুলো, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা সংরক্ষিত ও এই প্রাচীন বুদ্ধ মন্দির Monument of National Importance এর অন্তর্গত।

খুবই সযত্নে, প্রায় আন্তর্জাতিক মাপদণ্ডে এই প্রাচীন বুদ্ধ মন্দিরকে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এই বুদ্ধ মন্দিরের প্রধান প্রার্থনা গৃহকে chaityagrha বলা হয়, এবং এই chaityagrha ও এর স্তূপ এই ভাজে কেভের প্রধান আকর্ষণ।

বিশাল গুহা বা গুহা-মন্দিরের অর্ধ চন্দ্রাকার ছাদে, চোখ রাখলে দেখা যায় – কাঠের তৈরি বিম। আর অনুমান করা হয় – ঐ গুহায় কাঠের ছাদ অন্তত পক্ষে দুই হাজার বছর আগের তৈরি। প্রধান গুহার পাশে ছোট ছোট গুহা দেখা যায় – সম্ভবত বৌদ্ধ মঙ্কদের থাকার জায়গা ছিল। পাহাড়ের গা বেয়ে সরু ঝর্ণা, বা জলের রেখা নেমে আসে।

গুহা গুলোর ছায়ায় এক অদ্ভুত শীতল পরিবেশ – এখানে এসে, একটু বসে, জিরিয়ে নিতে নিতে প্রাচীন এই জায়গাকে, এই জায়গার সবুজকে নিজের মধ্যে ধারণ করে নিয়ে, এই প্রাচীনের অংশীদার হয়ে ফিরতে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, India, Maharashtra, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s