চোখের সামনে দিয়ে যখন দিনের শেষ বাসটি হুঁশ করে বেরিয়ে যায়, মনের অবস্থা তখন কেমন হয়! তাও যদি বিদেশ বিভূঁইয়ে জঙ্গলের মধ্যে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় – রীতিমত আতঙ্কই হয়।
তুলুসের এক প্রান্ত ছুঁয়ে যে ক্যানাল চলে গেছে, নামটি তার ‘ক্যানাল দু মিদি’। ক্যানালের দু’পাশে সাজানো প্ল্যন গাছের সারি, তুলুসবাসির ক্লান্ত দিনের শ্রান্তির জায়গা এই ক্যানাল ধারের রাস্তা – সারা বছর ধরে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানালের দুই ধারের সারি বাঁধা গাছ গুলোরও রঙ বদল চলে, আর এই জায়গাকে এক মায়াময় সৌন্দর্যে ভরে রাখে।
শান্ত, সবুজ, দীর্ঘ সেই ক্যানালের জলের উৎস সেন্ট ফেরল। জঙ্গলের মাঝে পাহাড়ের উপরে বিশাল এই ড্যামটি সারা বছর ক্যানাল দু মিদিতে জলের যোগান দেয়। গরমের সময়ে, পেছনে ব্ল্যাক মাউন্টেন এলাকা নিয়ে বিশাল এই জলাধারের সৈকতটি তুলুসবাসীর এক বিনোদন ভূমি। সেন্ট ফেরল ড্যামের পাশ থেকেই শুরু হয়েছে ব্ল্যাক মাউন্টেনের ঘন জঙ্গল। সামারে, গরমে অনেকেই সেখানে ক্যাম্পিং, হাইকিং করতে যায়। তবে আমাদের উদ্দ্যেশ্য ছিল সারা দিন জঙ্গলের রাস্তায় হেঁটে, জলের ধারে বসে রোদ গায়ে মেখে, এক ছোটখাটো পিকনিকের মতো করে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো তুলুসে।
কিন্তু, খুবই ভুল হয়ে গেল। যে বাস স্টপে আমাদের নামিয়ে দিয়েছিল, ফেরার সময়ে সেই বাস স্টপের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাস যে সেখানে দাঁড়ায় না, একদম জানা ছিল না। চোখের সামনে দিয়ে শেষ বাসটি বেরিয়ে গেল। মাথা চাপড়ে, হাত দেখিয়েও ড্রাইভার থামল না। কি করবো এবার? এই জঙ্গলেই থাকতে হবে? কি ভাবে ফিরব? রাত নামলে এখানে কি কোন জন্তু আসে? এখানে হোটেল কোথায়? ট্যাক্সি কোথায় পাবো? রাতের দিকে আবার বেশ ঠাণ্ডা পড়ে, সঙ্গে কোন গরম জামা নেই। এক ঝাঁক প্রশ্ন আমাদের নাজেহাল করে দিল।
সন্ধ্যা আটটা বাজে। এখানে গরমের সময়ে অনেক দেরীতে আঁধার নামে। তাই আটটার সময়েও শেষ বেলার রোদ ঝলমল করছে আর জঙ্গলের পাশে কাঠের ছোট্ট গুমটি দোকান ঘরের মতো টুরিস্ট অফিসটি এখনো খোলা। দৌড়ে গিয়ে টুরিস্ট অফিসে জিজ্ঞেস করলাম – হোটেল কোথায়, কি ভাবে যাব?
টুরিস্ট অফিসের একমাত্র কর্মী, মেয়েটি পেশাদারী হেসে বলল – এই এলাকার এক মাত্র হোটেল, এখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। আর রবিবারে এই জঙ্গলে এই সময়ে এখানে কোন ট্যাক্সি পাবে না।
কি হবে এবার? রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। বেড়াতে এসে এমনি পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনোই হই নি। কি করি? একটাও দোকান পাটও নেই আশেপাশে।
ভাবতে ভাবতে বললাম – রাভেলের দিকে হাঁটতে শুরু করি। এখান থেকে হেঁটে রাভেল পৌঁছে যাব অন্ধকার নামার আগে, আর রাভেল একটু বড় জায়গা, হোটেল পেয়ে যেতে পারি। হোটেলে থেকে কাল সকালে তুলুস ফিরব।
এমনি অবস্থায় খড়কুটো যা পাই তাই আঁকড়ে ধরি। সারাদিন ঘুরে যদিও খুবই ক্লান্ত কিন্তু অচেনা জায়গায় রাতে জঙ্গলে থাকার চেয়ে রাস্তা ধরে হাঁটাই শ্রেয় বলে মনে হল। কিন্তু পা যে আর চলে না। রাভেলের দিকে একটু হেঁটেই আরও বিধ্বস্ত মনে হল। রাভেল গামী প্রচুর গাড়িকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে লিফট চাইলাম। চোখের সামনে গাড়ির স্রোত বয়ে চলেছে কেউই থামাচ্ছে না।
Apnar lekhar modhye pathok ke tene niye jabar irshoniyo khomota ache.
আচ্ছা! জেনে ভালো লাগলো। প্রেরণা পেলাম আরও লেখার। ধন্যবাদ।
Thanks for letting me camp out in your blog for a little while today. I had a great time and tried to leave my campsite as good as when I arrived. I’ll be back!
Thank you. You are welcome.