পশ্চিম ঘাটের শৈল শহর – মহাবালেশ্বর –এক (Arthur point, Mahabaleshwar, India )

শুনেছিলাম – পশ্চিম ঘাট পাহাড়ের খাদে বয়ে চলা, সাবিত্রী নদীকে ছুঁয়ে, খাড়া পাহাড়ের গা ঘেঁসে এক হাওয়া বয়, নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে আসে সেই হাওয়া। তীব্র অথচ ফুরফুরে সেই হওয়ার মুখে  যে কোন হালকা জিনিস ছেড়ে দিলে, সেটা অনায়াসে ঘুড়ির মতো পাক খেতে খেতে আকাশে উড়ে যায়।

ভিড়ে ঠাসা আর্থার সিট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে, এক টুকরো পাতলা কাগজ সেই খাদের মুখে ধরা মাত্রই খাদের নিচ থেকে উঠে আসা সেই তীব্র হাওয়া কাগজটিকে বহু উপরে উড়িয়ে নিয়ে গেল। উপস্থিত জনতা আশ্চর্য হয়ে সেই হাওয়ার চমৎকার দেখে।

অক্টোবরের ছুটি মানেই, মুম্বাই ও পুনের কাছের এই ছোট শৈল শহর, মানুষের ভিড়ে উপছে পড়ার উপক্রম – ঐ দুই শহর থেকে আসা গাড়ির ভিড়ে, এই শৈল শহর হয়তো পুনে বা মুম্বাইয়ের বায়ু দূষণের সঙ্গে অনায়াসে পাল্লা দিতে পারে।

তবে, পশ্চিম ঘাটের ঘন জঙ্গলের সবুজ, সেই বায়ু দূষণকে ধারণ করে নিয়ে, ভ্রমণ পিয়াসীদের এক মনোরম পরিবেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করে। নিরাশ করে না।

রাস্তার দুই পাশে ফুটে থাকা, হলুদ ফুলের দল সগর্বে হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা দোলাতে দোলাতে আমন্ত্রণ করে।

শুনেছি, বৃষ্টির ঠিক পরে পরেই নাকি মহাবালেশ্বরের হলুদ-সবুজ সৌন্দর্য দেখা যায়। যদিও পশ্চিম ঘাট আমাদের দেশের চিরহরিৎ জঙ্গলের মধ্যে আসে, স্থানীয়রা বলে, অন্য সময়ে পশ্চিম ঘাটের সৌন্দর্য ঠিক খোলে না।

আর, আমরা যাওয়ার ঠিক কিছুদিন আগেই বৃষ্টিতে নেয়ে ধুয়ে মহাবালেশ্বর যেন আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল – তাই আমরা চমৎকার উজ্জ্বল এক পাহাড়ি দিন উপহার পেয়েছিলাম।

যাইহোক, মহাবালেশ্বরের আর্থার সিট পয়েন্ট  থেকে আমরা মহাবালেশ্বর দর্শন শুরু করেছিলাম । সাধারণত, অনেকে অন্যান্য পয়েন্ট গুলো দেখে এসে, একদম শেষে এই পয়েন্টে আসে। কিন্তু, আমরা একটু অন্যরকম ভাবেই শুরু করলাম আর কি।

আর্থার সিট পয়েন্ট থেকে সাবিত্রী নদীকে সরু এক সুতোর মতোই মনে হয়। মাঝে মাঝে কুয়াশা আসে, ঢেকে দিয়ে যায়। আলো ছায়ার চমৎকার এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়।

কেন এই পয়েন্টের নাম – আর্থার সিট হয়েছিল? সামনের এক পাথুরে ফলকে লেখা আছে – Sir Arthur Malet, প্রতিদিন এই জায়গায় এসে দূরের সাবিত্রী নদীকে দেখতেন। যে নদী তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিল।

হয়তো, তিনি দূর থেকে ঐ নদীকে দেখে ওদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করতেন, বা প্রকৃতির নিঠুরতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতেন, কিংবা প্রশ্ন করতেন – কেন?

সাবিত্রী ছুঁয়ে আসা সেই পাগলা হাওয়ায় হয়তো মিশে থাকতো ওদের অস্তিত্বের শেষ কথা গুলো। কে জানে?

পড়ন্ত হলুদ দুপুরে পশ্চিম ঘাটের পাহাড়ের গায়ে যেন আজও একটু মন কেমনের উদাসী রেণু ভাসে। তাই মহাবালেশ্বরের ঐ আর্থার সিট পয়েন্ট থেকে একটু মন কেমন, একটু উদাসীনতা, একটু জীবন চেতনা নিয়ে ফিরতে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, India, Maharashtra, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s