কিছু কথা – ২

abak prithibi photo.JPG

মালাগা সমুদ্র তীরে সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম – চমৎকার ঝকঝকে মেডিটেরিয়ান দিন। হঠাৎ-ই মাঝ সমুদ্র থেকে এক ঝাক ঘন কুয়াশা তীরের দিকে ধেয়ে এলো। চারিদিক এক মেঘলা চাদরে ঢেকে দিল – সঙ্গে জলো হাওয়া।

মনে হল – বেশ তো ছিল, হঠাৎ এই কুয়াশা! দিনটা বুঝি বা ব্যর্থ হল। ইউরোপের উজ্জ্বল দিন যেমন চমৎকার, ঠিক তেমনি মেঘলা কুয়াশা ঘেরা দিন – বিষণ্ণতায় মোড়ানো, মনখারাপ দিয়ে ঘেরা। আমাদের মনে হল – ঐ কুয়াশারা আমাদের দিন মাটি করে দিল।

কিন্তু, ঐ জায়গার মানুষ – তারা কিন্তু দিব্যি হাসিমুখেই বলল – ও একটু পরেই কেটে যাবে। এটাই তো মালাগার নিয়ম।

এই যে স্থানীয় প্রকৃতিকে স্থানীয় মানুষের গ্রহন করে নেওয়ার ক্ষমতা – সেটাই জীবনের চরম সত্য। মনে হয়, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ মানুষকে মানসিক শক্তির যোগান দেয়।  প্রকৃতির যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার গল্পটি বড়ই আকর্ষণীয়।

মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির এক অদ্ভুত সংযোগ আছে। জীবনও মাঝে মাঝে বড়ই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে, কখনো কখনো এক যতি চিহ্ন এসে পথ আটকে দাঁড়ায়।

মনে হয়, মানুষের সমস্ত যুক্তি, চেতনাকে এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ এসে গ্রাস করে নেয়, যে সুড়ঙ্গের শেষে এক উজ্জ্বল দিন অপেক্ষা করছে, সেই সুড়ঙ্গটি এক দিন শেষ হবে – সেই কথাটি মানুষ ভুলেই যায়। ভাবে পথ বুঝি বা এখানেই শেষ হয়ে গেল। আর সেই গভীর বিষণ্ণতা অবশেষে মানুষকেই গ্রাস করে ফেলে।

গভীর সেই বিষণ্ণতা থেকে তাহলে মুক্তির কি উপায়?

আসলে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে এক একজন এক এক ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করে।

কেউ খুব লম্বা রাস্তা ধরে হাঁটতে যায়, কেউ গান গায়, কেউ কথা বলে, কেউ লেখে – মনের কথা, কেউ আঁকে ছবি, কেউ ঘর গোছায়, পরিষ্কার করে।

কেউ বা আবার খুব খেতে শুরু করে দেয় – আমাদের এক আত্মীয় আছে, ওকে দেখেছি, একটু মন খারাপ হলেই এক থাল ভাত খেয়ে নেয় – ও বলে বেশী করে ভাত খেলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। হতে পারে – কারণ, ভাত মানে সুগার, অনেক সময় এনার্জি বুস্ট করে দেয়।

আবার কেউ কেউ খুব বেশী ঝাল খায়। আসলে ঝাল খেলেও বিষণ্ণতা কেটে যায় – অল্প সময়ের জন্য হলেও কাটে। ঝাল আমাদের সিস্টেমে নানা ধরণের হরমোন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। আর মন ভালো হওয়ার হরমোন – ডোপামাইন নিঃসৃত করে। কেউ বা চকোলেট খায় – শুনেছি চকোলেটও আমাদের মস্তিককে আনন্দ দেয়।

আসলে আমরা যখন কোন কাজ করি – যে কোন কাজ, যে কাজ করে একটা রেজাল্ট পাই – যেমন বাজার করে, রান্না করে এক প্লেট সুস্বাদু খাবার তৈরি করি – প্রডাক্ট তৈরি করি, আমাদের মস্তিষ্ক ডোপামাইন নিঃসৃত করে, আর সেই হরমোনই আমাদের আনন্দ দেয়।

তাই অনেকেই বলে, মন খারাপ হলে আমি কাজ করি, হাঁটি, দৌড়ই – আসলে বিষণ্ণতায় যতই কাজ করা যায় – দেখা গেছে – বিষণ্ণতা ধীরে ধীরে কেটে যায়। দৈনন্দিন কাজই আমাদের এক উদ্দেশ্য দেয়, লক্ষ্য দেয়। যে ঘটনা, জিনিস বা মুহূর্ত আমাদের বিষণ্ণ করে – দৈনন্দিনতা আমাদের সেই মুহূর্ত থেকে দূরে নিয়ে যেতে শুরু করে।

আর প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। দীর্ঘ ভবিষ্যতের বোঝা না বয়ে বর্তমান সময়টিকে, বর্তমান মুহূর্তটি সুন্দর করে দেওয়ার মধ্যেও যে এক আনন্দ আছে – সেই কথাটি সর্বদা মনে রাখলে জীবনের পথ চলাটি অনেক সহজ হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Uncategorized and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s