প্রাগের প্রাচীন প্রাসাদ প্রাঙ্গণে (Vyšehrad, Prague, Czech Republic)

সেদিন শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্যের হালকা লালচে সোনালি আভা ছড়িয়ে ছিল ঐতিহাসিক শহরটির গা জুড়ে, সেই লালচে আভা ভালতাভা নদীকেও করে তুলেছিল চকচকে রঙিন – রক্তিম।

সেদিন প্রাগের সেই পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ‘Vysehrad’ বা upper castle  এর প্রাচীন  প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম, ঐতিহাসিক প্রাগ শহরের বুকে কি ভাবে সেই লালচে সোনালি আভা ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ধূসরের বুকে গিয়ে মিলিয়ে যায়, ঐতিহাসিক এই নগরীর গায়ে রহস্যময়তার এক চাদর জড়িয়ে যায় – আর পৃথিবীর বুকে এক রোম্যান্টিক সন্ধ্যার জন্ম দেয় – দেখেছিলাম, মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম। আর সেই শেষ বিকেলের অপূর্ব ছবিকে মনে গেঁথে নিয়েছিলাম।

প্রাগের ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র থেকে দূরে, ভালতাভা নদীর পাশে পাহাড়ের উপরে এই প্রাচীন ক্যাসলের অবস্থান। ভালতাভা নদীর পাশের বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এই ক্যাসলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায়। অবশ্য ট্রামও নেওয়া যায়।

সিঁড়ি বেয়ে ক্যাসল প্রাঙ্গণে এসে তার বিশাল পার্ক ছাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলে, সেই রাস্তা নিও গথিক স্টাইলে তৈরি, সেন্ট পল ও সেন্ট পিটার চার্চের কাছে এসে থামে।

এখানে স্থানীয় লোককথায় প্রচলিত আছে যে এই জায়গাতেই প্রথম চেক রাজকুমারের প্রাসাদ ছিল, এবং এই জায়গা থেকেই চেকের মানুষের প্রথম বসবাস তৈরি হয়েছিল, যা কিনা পরবর্তী কালে প্রাগ শহরে রূপান্তরিত হয়েছিল – কিন্তু, এই লোককথার কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। তবে, যদিও অনুমান করা হয় আসল স্থানীয় প্রাসাদ প্রায় 10th century তে তৈরি হয়েছিল।

ভালতাভা নদীর গায়ের পাথুরে পাহাড়ের উপরে এই ক্যাসলের অবস্থান সত্যিই মনোমুগ্ধোকর। এখানে এলে এক নজরে প্রাগ শহরকে দেখা যায়।

যেহেতু, প্রাগের ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র থেকে এই জায়গা অনেকটাই দূরে, এখানে সাধারণত টুরিস্টের আসা যাওয়া খুবই কম। তাই, এই জায়গায় এক অভুত শান্ত নির্জনতা জড়িয়ে থাকে। অনেক স্থানীয় মানুষ এখানে একটু নির্জনতার খোঁজে, সবুজের মধ্যে সময় কাটানোর জন্যে আসে – কিংবা, কেউ আসে ভালতাভা নদীর বুকে সূর্যাস্ত দেখার জন্যে, বা প্রাচীন শহরের গায়ে সন্ধ্যার রূপ দেখার জন্যে আসে।

জীবনে প্রচুর সন্ধ্যা নামে, কিন্তু, কোন কোন সন্ধ্যা যেন জীবনের গায়ে এক স্মরণীয় সন্ধ্যা হয়ে যায় – হয়ে যায় সন্ধ্যা মণি। প্রাগ ক্যাসলের সেই সন্ধ্যাটি যেন ঠিক তাই ছিল। এক স্বপ্ন রেণু মেশানো শান্ত সম্মোহিত সন্ধ্যা – যে সন্ধ্যায় মিশে থাকে নির্জনতার শব্দ, নদীর ভেজা বাতাসের ফিসফিস আর প্রাচীনের গাম্ভীর্য – অদ্ভুত মোহ মায়ায় মাখানো এক সন্ধ্যা। চলমান জীবনের পথ চলার সময়ে বার বার যে সন্ধ্যার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে জাগে। যে সন্ধ্যায় শান্তির এক ঠিকানা লেখা থাকে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Czech Republic, Eastern-Europe, Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s