বার্সিলোনা শহরের একদম কেন্দ্রের বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ স্কোয়ার – প্লাস দে এসপানা। যেখানে এসে বার্সিলোনা শহরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এসে জুড়ে যায়, জুড়ে যায় শহরের ব্যস্ততা, মানুষ, পৃথিবীর নানা দেশের টুরিস্ট, যে স্কোয়ার শহরটির স্পন্দন ধরে রাখে। শহরটিকে দেখতে গিয়ে সেই বিখ্যাত স্কোয়ারকে তো একবার দেখতে যেতেই হয়। তাছাড়া, বার্সিলোনার যে কোন জায়গায় যেতে হলে এখান থেকেই মেট্রো বা বাস নিতে হয়।
এই স্কোয়ারে এসে দেখা যায়, এক দিকের রাস্তা চলে গেছে – Montjuic পাহাড়ের ম্যাজিক ফোয়ারার দিকে, স্পেনের ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়ামের দিকে ও আরেক দিকের রাস্তাটি চলে গেছে শহরের মাঝ বরাবর।
স্কোয়ারটির কেন্দ্রে যেখানে এসে সমস্ত রাস্তা এক গোল কেন্দ্রে মিশে যায়, গোল হয়ে বাঁক নেয় – সেখানে স্তম্ভের মত যে ভাস্কর্যটি দেখা যায় – তা অনেকেরই নজর কেড়ে নিতে বাধ্য।
বার্সিলোনা শহরের এই মনুমেন্টকে, শহরটির এক প্রতীক বলা যায়। ১৯২৯ এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্যে বিশাল এই স্কোয়ারটি তৈরি হয়েছিল, আর যার একদম কেন্দ্রে এই মনুমেন্ট তৈরির কথা ছিল – কিন্তু, যথা সময়ে মনুমেন্টের কাজ সম্পূর্ণ হয় নি।
এই ফোয়ারাটির ডিজাইন দিয়েছিলেন Josep Maria Jujol , স্পেনের বিখ্যাত আর্কিটেক্ট Antoni Gaudí র সঙ্গে কাজ করে যিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ফোয়ারাটিকে কেন্দ্র করে যে ভাস্কর্য গুলো দেখা যায়, তার থিম ছিল – জল। আর এই ভাস্কর্য গুলো তৈরির জন্যে Jujol স্পেনের বিখ্যাত শিল্পীদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
ফোয়ারাকে ঘিরে তিনদিকে যে ভাস্কর্য গুলো দেখা যায়, তা – Iberian Peninsula কে ঘিরে যে তিনটে সমুদ্র আছে, এবং সেই Peninsula র মধ্য দিয়ে যে প্রধান তিনটে নদী – গুয়াদাল্ভিকির, Ebro ও Tagus বয়ে যায় – তার প্রতীক। আর তিন কোণের তিনটে ভাস্কর্য – প্রাচুর্য, স্বাস্থ্য ও ন্যাভিগেশনের প্রতীক। লোহা, মার্বেল এবং ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি, প্রায় তেত্রিশ মিটার উঁচু এই ফোয়ারা সত্যিই শিল্প, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের এক সম্পূর্ণ মিশ্রণ – যা এই শহরকে রূপ দিয়েছে, দিয়েছে সংস্কৃতি, সৌন্দর্য।
সন্ধ্যায় ঐ ফোয়ারার গায়ে জ্বলে ওঠে রূপকথার সাঁঝবাতি – হলুদ বাতি। যে বাতির আলো গায়ে মেখে ফোয়ারার ঐ ভাস্কর্যরা মিলে ঐতিহাসিক এই শহরকে আরও রহস্যময়, আরও ঐতিহাসিক করে তোলে।