এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সাদা তুষারের জাল বিস্তৃত আল্পস পাহাড়শ্রেণী ঘেরা শান্ত শহর Innsbruck এ এসে স্বভাবতই মনে সঙ্গীত ধ্বনি বাজে। Sill নদীর ধারের পশ্চিম অষ্ট্রিয়ার Tyrol অঞ্চলের রাজধানী এই শহর প্রায় সারা বছরই সহস্র ভ্রমণ পিয়াসীকে আকর্ষণ করে।
এই শহর winter sports এর জন্যে আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাত, এখানে উইন্টার অলিম্পিক হয়ে গেছে বেশ কয়েকবার। শীতে তুষার খেলার সমস্ত আয়োজন নিয়ে শীতেও এখানে হাজির হয় বহু ভ্রমণ পিয়াসী। তাই এই শহর “largest ski resort in the alps” হিসাবে খ্যাত।
এপ্রিলের এই সময়ের উজ্জ্বল দিনে হাজার টিউলিপ, নানান মরশুমি ফুল রাস্তার ধার, বাগান – আলো করে রেখেছে। ঘন নীল আকাশের পটভূমিতে আল্পস পাহাড় শ্রেণী যেন ছবি এঁকেছে। এই শহরে প্রতিটি রাস্তা, বাড়ী, রেস্টুরেন্ট – সমস্ত খুঁটিনাটি এতো ছন্দ বদ্ধ ভাবে সাজানো যে এসে মনে হয় যেন এক কবিতার ছন্দের মধ্যে হাঁটছি।
এখন এখানে আবহাওয়া চমৎকার, হাওয়ায় খুব বেশী শীতের প্রকোপ নেই আবার খুব বেশী গরমও নেই। তাই এই শহরে আমাদের পথ চলা খুবই আরামপ্রদ। এখন আবার ইস্টারের মরশুম, দোকানে দোকানে তাই ইস্টার এগের প্রচণ্ড প্রভাব। শহরের রাস্তায় রাস্তায় বড় বড় ইস্টার বানিরা চকোলেট বিতরণ করে চলেছে। ইস্টারের ছুটির আমেজ এখন বাতাসে। তাই, ওদের হাত থেকে চকোলেট নিয়ে রাস্তার দু’পাশের ইস্টারের মেজাজে সাজানো দোকান দেখতে দেখতে, ঐতিহাসিক বাঁধানো গলি পথ দিয়ে চলাই এখানের কেতা।
পুরনো শহর কেন্দ্রের মাঝে সোনালি ছাদের বেলকনি দেওয়া এক বাড়ীর সামনে এসে থমকে দাঁড়াতেই হয়। মাছের আঁশের মত সোনালি রঙের টাইলস দেওয়া এই বেলকনি ১৫০০ সালে Emperor Maximilian I এর জন্যে তৈরি হয়েছিল, এই সুক্ষ কারুকার্য খচিত কাঠের থাম ও সোনালি ছাদের বেলকনি ইন্সব্রুক শহরের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এখন এখানে প্রচুর টুরিস্ট। সেই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে রাজা ও রানী শহর স্কোয়ারের নানান উৎসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। এখন পৃথিবীর নানা জায়গার মানুষ এই বেলকনির ঐতিহাসিক মাধুর্য ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমায়। এখানে দেখেছি ছোট্ট অথচ ঐতিহাসিক মূল্যে অমূল্য সমস্ত জিনিস অতি সযত্নে রাখা থাকে এবং যথেষ্ট ভদ্র টুরিস্টরাও প্রচুর মর্যাদা দিয়ে সঠিক মুল্য বুঝে নিয়ে সেই জিনিস রক্ষা করার চেষ্টা করে।
যাইহোক, এই চত্তরের চারিদিকে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে। ছুটির আমেজে অনেকেই এপ্রিলের মৃদু রোদে বসে মানুষ দেখতে দেখতে কফির কাপে চুমুক দিয়েছে।
ইউরোপের এক ঐতিহাসিক শহরে বেড়াতে গিয়ে চার্চ, বেসিলিকা বা ক্যাথিড্রাল না দেখে কখনোই ফেরা যায় না। এই শহরে প্রচুর চার্চ ও ক্যাথিড্রাল। অদ্ভুত আবছায়া ময় এক শান্ত পরিবেশ প্রায় সমস্ত ক্যাথিড্রালের ভেতরে। St Jacob cathedral এর সামনে হাজার টিউলিপ যেন হাতছানি দিচ্ছে।
একে একে এই Innsbruck শহরের সমস্ত ছন্দে তাল মিলিয়ে নিয়ে ফেরার সময় হয়ে গেল। বেশিক্ষণ না থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়েই যে এসেছিলাম এখানে, তাই এখানের সৌন্দর্য যত টুকু পারি দু’চোখ ভরে দেখে নিতে কোন দ্বিধা করি নি।