ভি…য়ে…না – মোজার্টের কর্মভূমি, সুর সৃষ্টি ভূমি। আর এই শহর সুরের সেই কিংবদন্তি মোজার্টকে আজও বুক দিয়ে আগলে রেখেছে, ভিয়েনার একদম কেন্দ্রে উনিশ শতাব্দীর বিশাল পার্ক ‘Burggarten’ এর এক দিকে মোজার্ট স্ট্যাচুই তার প্রমাণ।
ঐতিহাসিক এই শহরের গলিতে আজও শোণা যায় মোজার্টের সুর, আজও এই শহর ও তার মানুষ মোজার্ট নস্টালজিয়ায় ডুবে যায়, এই শহরের পথে চলতে চলতে শহরের গলির নানান শব্দের সঙ্গে হঠাৎ ই শোণা যায় এক দল ছাত্র ছাত্রীর বাজানো মোজার্টের কোন এক সুর – হৃদয় নিংড়ে ওঠে।
মনে হয় – এই সুন্দর পৃথিবীকে যেন আরও সুন্দর করে তৈরি করেছে মোজার্টের সুর, তাঁর মতো মহান সুরকারেরা যেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কোন এক অংশ নিয়ে জন্মেছে আর একের পর এক সৃষ্টি করে গেছে মহান সেই সুর, যার গভীরতায় আজও পৃথিবীর মানুষ ডুবে আছে – সেই সুর যা মানব জীবনের সমস্ত ধরণের অনুভূতিকে ব্যক্ত করে।
ভিয়েনায় এসে, সন্ধ্যের আগে মোজার্টের মতো পোশাকে সেজে ওঠা যুবক যুবতীদের দেখে মনে হয় – পৃথিবী যতই আধুনিক হোক না কেন, এগিয়ে যাক না কেন, সেই প্রাচীন সুরের মোহ মায়ায় মধ্যেই কোথায় যেন লুকিয়ে আছে মানুষের মনের গভীর শান্তির এক ভোমরা। আর এখানে মানুষ যেন সেই নস্টালজিক সুরের সন্ধানেই ফিরে ফিরে আসে।
এখানের মানুষ মোজার্টের সুরের মায়ায় এমন ভাবে ডুবে আছে যে, শুধু মাত্র অপূর্ব সুর-লহরীকে কানে শুনেই থেমে থাকে নি – এরা মোজার্টের সুরকে যেন পঞ্চ ইন্দিয় দিয়ে অনুভব করতে চায়, চেখে দেখতে চায় – তাই তৈরি হয় মোজার্ট চকোলেট, মুখে দিলে গলে যায়, একটু পেস্তা বাদাম, মিষ্টি – এমনি মোজার্ট চকোলেটের স্বাদ।
ভিয়েনায় মোজার্ট যেন এক রূপকথা, এক কিংবদন্তি, এক ব্র্যান্ড। আর সেই মোজার্টের কিংবদন্তি ও মোজার্ট ব্র্যান্ডকে ঘিরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মোজার্ট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে।
পৃথিবীতে কোন কোন মানুষ প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয় – আর ওরা ঠিক সাধারণ মানুষ না সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং, তা নিয়ে সাধারণ মানুষদের খুবই সন্দেহ হয়, তাঁদের সেই অসীম প্রতিভা ঘিরে এক রহস্য তৈরি হয়। আর মোজার্ট ও তাঁকে ঘিরে কিংবদন্তি, তাঁর তৈরি সুর – সব নিয়ে ভিয়েনায় যেন ঠিক তেমনি এক রহস্য দানা বাঁধে।
কি ভাবে এক সাধারণ মানুষ তাঁর জীবনকালে এমন সুর তৈরি করে দিয়ে যেতে পারে, যা কিনা কয়েকশো বছরেও তাঁর আকর্ষণ হারায় না, নিজস্বতা বজায় রাখে? যে সুর শুনে আজও মানুষের সমস্ত অনুভূতি জাগ্রত হয়, ভালো লাগায় মাতাল হয় মন বা হৃদয় নিঙড়ানো ব্যাথায় অঝোরে অশ্রু ঝরে চোখে? কি ছিল তাঁর প্রেরণা, তাঁর অনুভূতি, ব্যথা বেদনা যা কিনা সুর হয়ে রয়ে গেল এই পৃথিবীতে – সবই এক রহস্য নয় কি?