আলবি – দক্ষিণ ফ্রান্সের, মিদি-পিরেনিস অঞ্চলের এক ছোট্ট শহর। শহরটাতে পা রেখেই মনে হতে পারে – ফরাসি নস্টালজিয়ার দেশে, কিংবা ফরাসী ইতিহাসের পাতায় এসে পৌঁছে গেলাম না তো। ফ্রান্সের অন্যতম টুরিস্ট গন্ত্যব্য তালিকায় প্রথম সারিতে এর নাম না থাকলেও, দক্ষিন ফ্রান্সের এই ছোট্ট শহরকে অনেকেই দেখতে চায়।
দক্ষিন ফ্রান্সের এই শহরকে, ঠিক শহর না বলে, ঐতিহাসিক সিনেমার এক সেট বললেও, মনে হয় ভুল বলা হবে না। এই শহর, ফ্রান্সের বহু পুরনো, ভুলে যাওয়া দিন গুলোকে আজও ধরে রেখেছে – তাই, এই বিশপ শাসিত ঐতিহাসিক এই শহরটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় আছে।
সামারের উজ্জ্বল দিনে, ঝকঝকে নীল আকাশ, সোনালি রুদ্দুর, সব দিয়ে কে যেন সেই দিন, এই ঐতিহাসিক শহরটাকে আরও নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে দিয়েছিল।
ইউরোপের সামারের সোনালি রোদ্দুরকে পিঠে নিয়ে, এই শহরটিকে হেঁটে হেঁটে দেখে নিতে তাই অনেকেই শহরে এসেছিল। শহর বলতেই যে যানজট, ধোঁয়া, ট্র্যাফিকের শব্দ, ভিড়, ব্যস্ততার কথাই আমাদের মনে ভাসে, দক্ষিন ফ্রান্সের এই শহরে এলে শহরের সেই ছবি ভুল প্রমাণিত হয়।
এই শহরে এসে মনে হয়, অদ্ভুত এক শান্ত, ধীর লয়ে সাউদার্ন ফ্রান্সের এই শহরের জীবন বয়ে চলেছে। লাল ইটের তৈরি বিশাল স্থাপত্য, ইতিহাস, চার্চ, পুরনো সেতু, টার্ন নদীর শান্ত বয়ে চলা, সব নিয়ে এই শহরের নিশ্চিন্ত ছন্দটি বাঁধা – এ যেন কোন এক নিশ্চিন্ত পুরের ঠিকানা।
লাল ইটের তৈরি ঐতিহাসিক বিল্ডিং গুলোর খাঁজে, সোনালি দুপুরের নরম রোদ ক্ষণিক থমকে যায় – এক মুহূর্তের অপূর্ব ছবি তৈরি হয়। সেই ইট রঙা বিল্ডিং গুলো রোদের উত্তাপ নিতে নিতে আজও ইতিহাসকে বড় যত্নে আগলে রাখে। অনেক অনেক পুরনো এক সময়ের ছোঁয়া পেতে, অনুভব করতে মানুষ ঐ ছোট্ট শহরকে দেখতে যায়।
আর, সেই ঐতিহাসিক শহরের যে গলি বাঁক নিয়ে মিশে গেছে অন্য এক গলিতে – সেই গলি পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে এক উপলব্ধির জন্ম হয়। জীবন উপলব্ধি – ঐ বিশাল স্থাপত্য, ঐ ঐতিহাসিক শহর আমার আগে ঐ জায়গায় ছিল, আমার পরেও ঐ জায়গায় থাকবে – আর ঐ ঐতিহাসিক শহরে গিয়ে পৃথিবীতে আমার উপস্থিতি কত ক্ষণিক সময়ের জন্যে তা যেন আরও দৃঢ় ভাবে প্রমান হয়।