সে তো গেল অশুদ্ধ, নোংরা জলকে পরিস্কার করার কথা। কিন্তু, ঐ জল যে পাত্রে রাখা হচ্ছে – প্লাস্টিকের বোতল, তার বিশুদ্ধতা কে যাচাই করবে? বিশুদ্ধ জল ঐ প্লাস্টিকের বোতল জাত হওয়ার পরে, ঐ প্লাস্টিক থেকে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ঐ জলে দ্রবীভূত হচ্ছে কিনা তার খবর কে রাখবে?
যে কোন উৎস থেকে জল নিয়ে, ফিল্টার করে, প্লাস্টিকের বোতলে ভরে দিয়ে দেশ বিদেশে চালান করে দেওয়া – বিশ্ব বাজারের ট্রিলিয়ন ডলারের এক ব্যবসা – অনেকটা তরল সোনা বলা যায়।
দিব্যি চলছে, সারা পৃথিবীর মানুষ নির্ধিদ্বায় প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল পান করে বোতল গুলো যেখানে ইচ্ছে ফেলে দিচ্ছে। এই তো কদিন আগের কথা, আমাদের কোন এক রাজনেত্রি পরিবেশ নিয়ে দিব্যি বড় বড় ভাষণ দিয়ে, প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল পান করে, নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
আজকের আমরা এক মুহূর্তের তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে যে পাত্র, মানে ঐ প্লাস্টিকের বোতল থেকে যে জল পান করলাম, তারপর ঐ প্লাস্টিকের বোতল পৃথিবীর বুকে কত হাজার কোটি বছর ধরে থেকে যাবে, পৃথিবীর জল হাওয়াকে বিষাক্ত করে যাবে তার হিসাব করতে গিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা চমকে ওঠেন।
জল কোম্পানিরা তো বোতলের গায়ে ‘দয়া করে রিসাইকেল করুন’ লিখেই নিজেদের দ্বায়িত্ব শেষ করে দেয়। খোদ আমেরিকার মত উন্নত দেশেই দেখা গেছে – প্লাস্টিকের বোতল সম্পূর্ণ ভাবে রিসাইকেল হয় না। তাছাড়া, এই মুহূর্তে আমাদের হাতে যে প্লাস্টিকের বোতল ভরা জল আছে, সেই প্লাস্টিকের বোতল কোন রিসাইকেল করা বোতল থেকে তৈরি হয়েছে, তার খবর কেউই রাখে না। না, কোন জল কোম্পানিও সেই খবর রাখে না।
কিন্তু, ব্যাপারটা তো সেখানেই থেমে নেই।
প্লাস্টিক বোতল জাত ঐ জল মানুষের স্বাস্থ্যের দিকেও হাত বাড়িয়েছে – যে বোতল জাত জল মানুষের জীবন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, বিশুদ্ধতার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই বোতল ভরা জল যে ধীরে ধীরে শরীরের হরমোন লেভেলে তুফান তুলতে পারে, দীর্ঘ দিন ধরে প্লাস্টিক বোতলের জল পান করলে দেখা দিতে পারে অন্য নানান শারীরিক অসুখ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে – তাপমাত্রার হেরফেরে, বিশেষ করে উচ্চ তাপমাত্রায়, প্লাস্টিকের বোতল থেকে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ধীরে ধীরে জলে মিশে যায়। তাই দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় সংরক্ষিত প্লাস্টিকের বোতলের জল ধীরে ধীরে দূষিত হতে শুরু করে।
আর তাই আজ ইউরোপের অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ, প্লাস্টিকের বোতলের জল এড়িয়ে চলে। সেই জন্যে অনেক জল কোম্পানি ইউরোপে জল বিক্রির জন্যে কাঁচের বোতলে ফিরে গেছে। কিন্তু, তেষ্টা পেলে, এক ঢোঁক জল পেলেই যখন প্রান পাওয়া যায়, জল কোন পাত্রে আছে তার বিচার করা সত্যিই মুশকিল। তাই প্লাস্টিকের বোতলই সই। তবে, প্লাস্টিকের বোতলের জল পান করে বোতল গুলোকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দেওয়াই নিয়ম। রিসাইকেল – করা মানে পুনরায় জল ভরে ব্যবহার করা নয়।