নব্বইয়ের দশকে নেসলে কোম্পানি যখন ন্যসক্যাফে তৈরি করতো, কফি ব্রিউ করার সময় জলের দরকার হতো। এবং সেই জলকে স্ট্যান্ডারাইজড করার পদ্ধতিও ওদের জানা ছিল। সেই সময়ে নেসলে নিয়ে এল এক নতুন আইডিয়া – বোতলজাত জল, নাম – পিওর লাইফ।
সেই সময় নেসলের সি ই ও, ভাবল যদি সাধারন জলকে স্ট্যান্ডারাইজ করে, মিনারেল যোগ করে, জলের স্বাদ বাড়ানো যায়! মানে যদি, ফ্যাক্টরিতেই বিশুদ্ধ জল তৈরি করা যায়! যথা ভাবা, তথা কাজ।
জলকে স্ট্যান্ডারাইজ করার যন্ত্র পাতি তো নেসলের কাছে মজুত ছিলই। সঙ্গে যোগ হল, বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি।
পিওর লাইফ, তৈরির জন্যে নেসলে অতি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিল। রিভার্স অসমোসিস – এক আধুনিক পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে নাসা মহাকাশযাত্রীদের জন্যে পানীয় জলের যোগান দিয়েছিল। নেসলে সেই পদ্ধতিকেই ‘পিওর লাইফ’ জল তৈরির জন্যে কাজে লাগালো। এই রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি দিয়ে সাধারন জলকে ডিস্টিল্ড ওয়াটারে পরিণত করা হয় – তারপর, সেই পরিস্কার বিশুদ্ধ জলে আবার প্রয়োজনীয় মিনারেল ইঞ্জেক্ট করে দিয়ে, জলের স্বাদ দেওয়া হয়।
নেসলের জল – পিওর লাইফ, ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়ে, ফ্যাক্টরিতেই প্ল্যাস্টিক বোতলজাত হয়ে যায়। যদিও, নেসলে ইউরোপের বেশ কিছু জায়গায়, বোতল জাত করার জন্যে ঝর্নার জল ব্যবহার করে। কিন্তু, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, নেসলে কিন্তু স্থানীয় পৌরসভার পাইপের জলই ব্যবহার করে। আর সেখানেই নেসলের পিওর লাইফ, ডেননের – এভিওনকে অনেক পেছনে ফেলে, এগিয়ে গেল।
ডেনন কোম্পানির – এভিওন, যার উৎস ফ্রান্সের ঝর্ণার জল ও নেসলের – পিউর লাইফ, যার উৎস স্থানীয় পৌরসভার জল। আর এই ছিল ঐ দুই কোম্পানির জলের পার্থক্য।
আর সেই জন্যে নেসলের জল সরবরাহ করতে ট্রান্সপোর্টেশনের খরচ খুবই কমে গেল। তাই নেসলে, অনেক কম খরচে জলের বোতল বিক্রি করতে শুরু করে দিল। আর রাতারাতি, জলের বিশ্ব বাজারে নেসলের পিওর লাইফ রাজত্ব করতে শুরু করে দিল।
তারপর, এই দুই কোম্পানি, পৃথিবীকে দেখিয়ে দিল, কি ভাবে এক অতিসাধারণ প্রাকৃতিক জলকে এক লাভজনক পণ্যে রূপান্তরিত করা যায়। আজ, ইউরোপের যে কোন সুপার মার্কেটে অন্তত কুড়ি থেকে পঁচিশ কিংবা তারও বেশি রকমের জলের ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। যে জল বিনামূল্যে ঝর্ণা, নদী, পুকুরে পাওয়া যায়, সেই জল বোতলবন্দী হয়ে যেন উন্নত দেশের অতি আধুনিক সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে চলেছে।
আর ভাবা যায় – জল পান করার জন্যে ওদের বিজ্ঞাপন দিতে হয়? যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তা কেন মানুষ কিনবে? আর মানুষকে কিনতে বাধ্য করে – বিজ্ঞাপন। তাই নানা ধরনের জলের বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ ঐ বোতলজাত জল কিনে পান করতে বাধ্য হল – বলা যায়।
কিন্তু, প্রশ্ন তো একটা রয়েই যায়।
চলবে