এপ্রিলের সেই শেষ দুপুরের রংটি ছিল হলুদ – গাঢ় হলুদ, সোনালি ঘেঁষা। আর মনে হয়, সেই নিঝুম মাতাল হলুদের উজ্জ্বলতা, এক বন্য আদিম আবেগের নেশায়, মন মাতায়।
সেদিন, জঙ্গলের গাছের ফাঁকে ফাঁকে জড়িয়ে ছিল সেই শেষ দুপুরের হলুদ আলোর আভা। সেই নরম রোদে ছড়িয়ে ছিল বন্য অথচ এক শান্ত আবেগ। নীল আকাশের পটে আঁকা ছিল তুষার সাদা মেঘের ছবি, কে যেন নিখুঁত ভাবে সেই দিনের ছবিটিকে সমস্ত সৌন্দর্য দিয়ে সম্পূর্ণ করে তুলেছিল।
আর প্রকৃতির সেই মন ভোলানো খেলায় সঙ্গ দিয়েছিল মানুষ – মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা, স্থাপত্য শিল্প, আর্ট দিয়ে সাজিয়ে দিতে চেয়েছিল প্রকৃতির প্রেক্ষাপটকে – জার্মানির বেভেরিয়া অঞ্চলের রূপকথা প্রাসাদ গুলো দেখে তো আমার তাই মনে হয়েছিল।
যাইহোক, বেভেরিয়ার জনপ্রিয় ক্যাসল Neuschwanstein Castle কে দেখে জঙ্গলের রাস্তা ধরে ফেরার পথে, দূর থেকে যে ক্যাসল নজরে পড়েছিল, নাম তার – Hohenschwangau । জার্মানির বেভেরিয়া অঞ্চলের রাজা ম্যাক্সমিলিয়ান তার গরমের ছুটি কাটানো ও শিকারের জন্যে জঙ্গলের মধ্যে থাকার জন্যে এই ক্যাসল তৈরি করেছিলেন। ছবির মতো সুন্দর জার্মান গ্রাম Hohenschwangau এর নামেই এই ক্যাসলের নাম। এখানে এসে দূরে অষ্ট্রিয়া ও জার্মান সীমান্তের তুষার ঢাকা পাহাড় শ্রেণী দেখা যায়।
দক্ষিণ জার্মানির এই Hohenschwangau ক্যাসল জনপ্রিয়তা ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে, Neuschwanstein ক্যাসলের তুলনায় যদিও একটু ম্রিয়মাণ, টুরিস্টদের কাছে একটু অবহেলিত কিন্তু, এই ক্যাসল না থাকলে হয়তো রূপকথার মতো সুন্দর ঐ Neuschwanstein Castle এর জন্মই হতো না – সে কথা অবশ্য অনেকেই মেনে নেয়।
কারণ, এই ক্যাসলেই বেভেরিয়ার রাজা Ludwig II এর ছেলেবেলা কেটেছিল, আর এই অঞ্চলের আল্পাইন পাহাড় শ্রেণীর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম লেক Alpsee এর গভীরতা, রহস্য রাজা Ludwig II এর মধ্যে ধীরে ধীরে রূপকথার এক নেশা ছড়িয়ে দিয়েছিল। প্রকৃতির সেই অপূর্ব সৌন্দর্যের নেশা থেকে জীবনে তিনি কিছুতেই মুক্তি পান নি। তাই, এই ক্যাসলের থেকে আরও উঁচু পাহাড়, যেখান থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও ভালো ভাবে দেখা যায় – সেই জায়গায় তিনি তার স্বপ্নের প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন।
আজও প্রতিদিন, এই ক্যাসলের ঘর গুলোকে দেখার জন্যে প্রতিদিন পৃথিবীর নানা ভাষায় গাইডেড ট্যুর হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ ঐ দুই ক্যাসলের প্রাঙ্গণে, জার্মানির সেই অতীত দিনের সুন্দর স্বপ্নময় রূপকথা পৃথিবীর খোঁজে, গল্পের খোঁজে, ভ্রমণের নেশায় এসে জমায়েত হয়। হয়তো – এখানে যারা আসে, নিজের জীবনে রূপকথার এমনি একটি দিনের হলুদ দুপুরকে তারা জুড়ে নেয়, আর ঐ দিনকে তার সারা জীবনের এক গল্প, এক ছবি হিসাবে, বড় যত্নে রেখে দেয়।