আধুনিক ব্যস্ত স্টকহোম শহরের একদম কেন্দ্রেই যে এক সবুজ, শান্ত, রূপকথার গল্পের মতো সাজানো হলুদ-সবুজ এক দ্বীপ থাকতে পারে, তা বোধহয় স্টকহোম শহরে না এলে জানা যেত না।
স্টকহোম শহরটাই যেন প্রচুর দ্বীপের এক সমন্বয়। আর, সেই দ্বীপ গুলোর মধ্যে প্রচুর সেতু দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা হয়। দেখি – সেই সেতু গুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে যে কোন দ্বীপে অবাধ যাতায়াত করতে কোন অসুবিধাই নেই। অবশ্য শহর কেন্দ্র থেকে ফেরী বোট ধরে, কিংবা বাস ও ট্রাম ধরেও ঐ সবুজ দ্বীপে পৌঁছে যাওয়া যায়।
আর সেই দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ বলতে, মিউজিয়াম, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, মনুমেন্ট, গ্যালারী ও প্রচুর খোলামেলা সবুজ জায়গা। এবং অক্টোবরের সোনালি হলুদ জঙ্গল। তাই, এই আইল্যান্ড পার্ক, প্রায় সারা বছরই স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে টুরিস্ট সবাইকেই নিমন্ত্রণ জানায়।
সেদিন, যদিও এই পার্কের পথে জন মানব খুব কমই চোখে পড়েছিল, শুনেছি, স্টকহোম বাসীদের জন্যে, প্রকৃতির কাছাকাছি এসে সময় কাটানোর এক অতি প্রিয় জায়গা এই আইল্যান্ড পার্ক। প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ এই আইল্যান্ড পার্ক দেখতে আসে – মিউজিয়াম থেকে শুরু করে পার্ক দেখা – সব নিয়ে, এখানে সারা দিন অনায়াসেই কেটে যায়।
পনেরো শতাব্দী থেকে, এই বিশাল শান্ত সবুজ হলুদ বাগান সুইডিশ রাজ পরিবারের কাছে আছে, বর্তমানে সুইডেনের রয়্যাল কোর্ট এই পার্কের দেখাশোনার ভার নিয়েছে। সেই রাজা, সেই রাজ পরিবার নাই বা থাকুক, কিন্তু এই রয়্যাল গার্ডেন যেন সেই সময়কে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছে।
স্টকহোমে অক্টোবরের প্রকৃতি যতই ঠাণ্ডা, ততোই যে পাতা ঝরানোর অপূর্ব মাতাল করা রঙে রঙিন। স্টকহোমে যে দিনটির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল, মেঘলা আকাশ ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি নিয়ে দিনের মেজাজটি যেন একটু গম্ভীর ও ধূসর ছিল।
কিন্তু, স্টকহোমের বাগানের উজ্জ্বল হলুদ কমলা রঙে রঙিন গাছ গুলো সেই ধূসর গম্ভীর দিনে রং ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছিল। আর এই যে স্টকহোমের বাগানে ধূসর দিনের নিঝুম প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়ে রইলাম, দেখলাম – সেই তো আমাদের ভ্রমণ পথের এক উপহার, সেই উপহার টুকু মনে ধরে রাখি, জীবনের এক সঞ্চয় হয়ে রয় সেই দিন। ভালো লাগে।