এই ক্যাসল পাহাড়ের পার্ক থেকে যেদিকে ইচ্ছে চোখ রাখলে প্রকৃতি সমুদ্র ও মানুষের যুগ যুগান্তরের সেই অটুট বন্ধনের সঙ্গেই দেখা হয় – এখানে দিন শুরু হয়, নিস বন্দর ও ঐতিহাসিক নিসের ওপারে সূর্যদোয় দেখে ও দিনের শেষ হয় দীর্ঘ প্রমেনাদ দে অংলের ওপারে সূর্যাস্ত দেখে, যেখানে আকাশ ও সমুদ্র মিশে গেছে এক রেখায়।
সমুদ্রের তীর ঘেঁসে যে দীর্ঘ বড় রাস্তা – প্রমেনাদ দে অংলে, চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎই দেখা যায়, রাস্তাটি অতি নাটকীয় ভাবে, একটু উঁচু হয়ে এক বাঁক নিয়েছে, আর সেখানেই নিসের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ – ক্যাসল হিল বা Colline du Château এর অবস্থান। যদিও এই জায়গার নামে ‘ক্যাসল’ বা ‘স্যাঁতো’ শব্দটি জড়িয়ে আছে – কিন্তু এই পাহাড়কে ক্যাসলের চেয়েও পার্ক বলাই বোধহয় ভালো।
এগারো থেকে আঠারো শতাব্দী পর্যন্ত এই জায়গায়, সমুদ্রের দিকে মুখ করে বিশাল দুর্গ বা ক্যাসল ছিল – কিন্তু, আঠারো শতাব্দীতে ফরাসী রাজা লুই চোদ্দ নিসের এই ক্যাসলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে এই ক্যাসল পাহাড় নিসের অন্যতম সুন্দর পার্ক ও এক বিখ্যাত টুরিস্ট আকর্ষণ, সেই ক্যাসল না থাকলেও এই পার্কের চারিদিকে ঐতিহাসিকতার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে।
আর যারা নিসে বসবাস করে, তারা বারবার করে বলে দেয় – ঐতিহাসিক নিস ও তার সমুদ্রকে এক নজরে দেখে নিতে হলে, অতি অবশ্যই, সমুদ্র থেকে প্রায় তিনশ ফিট উচ্চতার সিঁড়ি ভেঙ্গে কিংবা লিফটে চড়ে ক্যাসল হিলে আসতে হয়।
এখানে এলে, শুধু যে ঐতিহাসিক নিসকেই দেখা যায় তা নয়, এখান থেকে যেমন নিসের বিখ্যাত ও বিস্তৃত রাস্তা প্রমেনাদ দে অংলের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়, তেমনি পূর্বের নিস বন্দর থেকে শুরু করে পশ্চিমের Baie des Anges ও দেখা যায় – তাই এই জায়গায় যেমন নিসের সূর্যদোয় দেখা যায়, তেমনি সূর্যাস্তও দেখা যায় – কোথাও যেন দৃষ্টি বাঁধা মানে না – তাই, নিসের এই ক্যাসল পাহাড়কে the cradle of the sun বলা হয়। আর, এই জায়গায় নিসের প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্যের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিতে নিতেই সময় গড়িয়ে যায় – আর টুরিস্টরা সেই অপূর্ব মুহূর্তকে ধরে রেখে ফেরে নিজের পথে।