ফ্রান্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সুন্দর সৈকতের তালিকায় নিসের সমুদ্র সৈকতের নাম প্রথম দিকেই থাকে। সামারের উজ্জ্বল দিনে মেডিটেরিয়ানের উষ্ণ জলে গা ভাসানো ও মেডিটেরিয়ানের তীরে রোদ্র স্নানের জন্যে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ ফ্রান্সের এই সমুদ্র শহর – নিসে আসে। তখন, পরিবেশে ও উপস্থিত মানুষের মনে থাকে সমুদ্রের উদার নীল স্বাধীনতার এক মুক্ত উল্লাস।
আর সেই সময় নিসের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না – মেডিটেরিয়ানের নীল জল, নীল আকাশ ও সোনালি রোদ – সব দিয়ে তৈরি হয় মানুষের স্বপ্নময় ছুটির দিন গুলো – কিন্তু, ফেব্রুয়ারির ঠাণ্ডায় সেই উজ্জ্বল সৈকতই হয়ে যায় নির্জন, আর মেডিটেরিয়ানের বুকে, দিগন্তের ধূসর কালো মেঘেরা থেকে থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে দিয়ে যায়, আর সেই বৃষ্টি ভেজা বিকেলে নিসের সমুদ্র সৈকতের রূপ দেখতে গিয়ে এক অসীম অনন্তের মুখোমুখি হতে হয়।
ফ্রেঞ্চ রিভেইরার সৈকতের এক বিশেষ বিশেষত্ব হল – পাথুরে সৈকত। ছোট ছোট নুড়ি পাথরে ঢাকা সমুদ্র সৈকত, একদম সমুদ্রের বুকে গিয়ে মিশেছে সেই নুড়ি পাথরে ঢাকা সৈকত – প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল – বুঝি বা মানুষের তৈরি, কিন্তু প্রকৃতিই নাকি নিসের সমুদ্র সৈকতকে এমনি করেই তৈরি করেছে। তাই, ফেব্রুয়ারির সেই ধূসর বিকেলকে প্রেক্ষাপটে রেখে, নুড়ি পাথরে সাজানো নিস সমুদ্র সৈকত ধরে হেঁটে যেতে কোন অসুবিধা হয় না – তাছাড়া, মেডিটেরিয়ান সমুদ্র এখানে খুবই শান্ত।
বৃষ্টি ভেজা, শান্ত শীতের সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়িই যেন ঘনিয়ে আসে, দূরে দেখা যায় এক বয়স্ক দম্পতী ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে। সিগালের দল দিনের শেষ ওড়া টুকু সেরে নিয়ে কোথাও গিয়ে ডেরা বাঁধছে।
আর, ফেব্রিয়ারির বৃষ্টি ভেজা ঠাণ্ডা বাতাস, মেডিটেরিয়ানের বুক ছুঁয়ে এসে উড়িয়ে দিতে চায় সৈকতে উপস্থিত মানুষের চুল – কিংবা সেই বৃষ্টি ভেজা বাতাস এসে কানে কানে বলে দিয়ে যেতে চায় – দেখো একদিন সত্যিই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে, আর সেদিন তোমাদের এই জায়গায় অন্য কেউ এসে দাঁড়াবে, সেদিনও আমি এমনি করে তাদের ছুঁয়ে দিয়ে যাবো। অনন্ত কাল ধরেই আমি এই করে আসছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়ে চলেছি – কখনো থামি নি, জীবন মানেও তো তাই।