ফ্রেঞ্চ রিভেইরার অন্যতম শহর, বলা যায় ফ্রেঞ্চ রিভেইরার রানী এই শহর। শতাব্দী কাল ধরে, বছরের প্রায় সব সময়েই টুরিস্টের আনাগোনায় যেমন জমজমাট, তেমনি যে কোন ফরাসী উৎসব – বাস্তিল ডে, মিউজিক ডে থেকে শুরু করে ফুলের উৎসব, ক্রিসমাস, নতুন বছর সব উৎসবের তালে তাল মেলায় এই শহর ও এই শহর দেখতে আসা মানুষ। আর এই শহরে এলে, একবার সমুদ্র ঘেঁষা দীর্ঘ চওড়া রাস্তা – প্রমেনাদ দে অংলেতে একবার আসতেই হয়, যে কোন উৎসবের ঠিকানা যে সমুদ্র ঘেঁষা এই বড় রাস্তা।
ফরাসী মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের পাথুরে তীর ঘেঁসে, দীর্ঘ – প্রায় সাত কিলোমিটারের কাছাকাছি রাস্তাটির সঙ্গে ইংরেজদের নাম জড়িয়ে আছে – ইংরেজদের হাঁটার জায়গা। ইংল্যান্ডের বৃষ্টি ভেজা কুখ্যাত ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্যে, আঠারো শতাব্দীতে ব্রিটিশরা তাদের শীতের সময় কাটানোর জন্যে, ফরাসী এই শহর, ও মেডিটেরিয়ানের উষ্ণ আবহাওয়াকে বেছে নিয়েছিল। আর সেই সময়েই, ব্রিটিশরা সমুদ্রের তীর ঘেঁসে হাঁটার জন্যে তৈরি করেছিল দীর্ঘ এই রাস্তা – যা কিনা আজও, ছুটির দিনে মেডিটেরিয়ানের পাথুরে তীরে ফরাসীদের নিশ্চিন্ত সময় কাটানোর কিংবা হাঁটার এক ঠিকানা। আর আজ সকালে, নিসের সেই রাস্তায় ঘটে যাওয়া বর্বরতার খবর শুনে, সমগ্র বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যায়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এই পৃথিবীতেই দুই পৃথিবীর বাস – এক পৃথিবী চলেছে আলোর দিকে, আরেক পৃথিবী চলেছে মধ্য যুগের দিকে, মধ্য যুগীয় ধ্যান ধারণার দিকে, বিশ্বাস – অবিশ্বাসের দিকে – আর সর্বদাই সেই আলো ও অন্ধকারের পৃথিবীর মানুষের বাসিন্দাদের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক তীব্র দ্বন্দ্ব চলেছে।
আবার মনে হয় – এক দল মানুষ পৃথিবীকে নিজের দখলে রাখার জন্যে যত অন্ধকারের পথ ধরে চলেছে। কিন্তু, অবশেষে পৃথিবী কারোর দখলেই থাকে না – পৃথিবী চলে তার নিজের মতো করে। এ এক অদ্ভুত অংকের সমীকরণ। কেউই তার সমাধান জানে না, শুধুই এক সাময়িক সমাধান নিয়েই মানুষ পথ চলে। কেন এই অপূর্ব, সুন্দর পৃথিবীর মানুষ নিজেদের মধ্যেই অসন্তুষ্ট, অখুশি কে জানে। কেউই যেন কারোর কথা শুনতে চায় না, মানবতার দাম ধূলায় মিলিয়ে দিতে কিছু মানুষ যেন বদ্ধ পরিকর, মানুষ তার ভেতরের আদিম কুপ্রবৃত্তি গুলোকে জাগিয়ে তোলার জন্যে আপ্রান চেষ্টা করে চলেছে।
আধুনিকতার সমস্ত উপাদান ব্যবহার করে, পিছনের দিকে, অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে চলা – এ কোন ধরণের বর্বরতা, কোন ধরণের মানসিকতা? অন্ধকার পৃথিবী থেকে, আলোর দিকে আসার পথটা কি এতোই কঠিন? এতোই দুর্গম? এতোই জটিল? যে মানুষ তার নিজের সমস্ত বিচার বুদ্ধি হারিয়ে দিয়ে, মস্তিষ্কহীন হয়ে সেই অন্ধকারের পথ ধরেই হেঁটে চলেছে? কবিকেই যে মনে পড়ছে – কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সঙ্গীত হারা।