ম্যাপ যখন পথ দেখায় – তিন (Map Reading in European Cities )

আসলে, ইউরোপের প্রতিটি শহরের টুরিস্ট ম্যাপ গুলো এতোই বিস্তারিত, যে, কার বাড়ীর সামনে বড় গাছ আছে, কোন চার্চের সামনে খেজুর গাছ আছে – সবই ম্যাপে নিখুঁত ভাবে নির্দেশ করা থাকে। তাই, মনে হয় ভ্রমণের সমস্ত আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে, চিরাচরিত ম্যাপকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া ভালো। তাই, যে কোন নতুন শহরে গিয়ে, প্রথমেই সেই জায়গার ম্যাপ সংগ্রহ করে নিতে ভুলিনি।

ইউরোপের কোন কোন জায়গার স্থানীয় মানুষরা হয়তো জানেও না, সে যে শহরে বসবাস করছে, সেই শহরের এক সুন্দর বিস্তারিত ম্যাপ আছে – যেমন, খুবই সকালে, ভিলিনুসের এক ভদ্রলোককে ম্যাপ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা এখন, এই মুহূর্তে কোথায়?

তার নিজের শহরের ম্যাপ দেখে ভদ্রলোক যেন খুবই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল – অনেকক্ষণ ম্যাপটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে, মাথা চুলকে বলল – না, আমি জানি না, কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমরা কোথায় যাবে?

তারপর, একই অভিজ্ঞতা জাগ্রেবের পথেও হয়েছিল – সেদিন, হাতে সময় খুবই কম ছিল, ষ্টেশনের পথে যেতে গিয়ে পথ হারিয়ে, এক স্থানীয় ভদ্রলোককে দেখে, ম্যাপ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম – আমরা এখানে যাবো, এই রাস্তার নাম কি, ম্যাপে একটু দেখিয়ে দিন। ভদ্রলোক আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল – এই ম্যাপ তোমরা কোথায় পেলে?

অথচ ফ্রান্সে কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো – সেবার যখন তুলুস থেকে কিছু দূরে সেন্ট ফেরলে গিয়ে, দিনের শেষ বাসটি ছেড়ে গিয়েছিল, হিচ হাইকিং এর জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম – যে গাড়িটি আমাদের দেখে দাঁড়িয়েছিল, তারা, প্রথমেই ফ্রান্সের ম্যাপের এক বিশাল বই দেখে, আমাদের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়ে, আমাদেরকে ওদের গাড়িতে লিফট দিয়ে সবচেয়ে কাছের রেল ষ্টেশন – ‘কাস্তালনে-দারি’তে এনে নামিয়ে দিয়েছিল।

ওরা বলেছিল – ফ্রান্সের যে কোন জায়গার ম্যাপ বই ওদের গাড়িতেই থাকে, সঙ্গে নিয়ে ঘোরে, জি পি এস নাকি অনেক বার ওদেরকে ভুল পথে নিয়ে গেছে।

এ ক্ষেত্রে মনে হয়, সব সময় যে পুরনো হয়ে গেলেই কোন জিনিস, বা কোন সিস্টেমকে বাতিলের দলে ফেলে দিতে হয়, তার সব কিছুই বাজে, ডাউন মার্কেট হয়ে যায় – তা কিন্তু নয়, গত কয়েকশো বছরের পথ অতিক্রম করে যখন ম্যাপ আজকের দিনেও, নিজের এক জায়গা তৈরি করে নিয়েছে  – নিশ্চয়ই নাগরিক জীবনে তার কোন এক মহিমা আছে, গুরুত্ব আছে।

তাই, আমাদের মতে, ইউরোপ ভ্রমণের পথে স্মার্ট ফোনের পাশে ঐতিহ্যময় ম্যাপও জায়গা করে নিলে, যদি ভ্রমণের সুরক্ষা বাড়ে, দুইয়েরই উদ্দেশ্য যখন একই – ভ্রমনার্থিদের পথ দেখানো – তবে দুই-ই পাশাপাশি থাকুক।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান