এপ্রিলের ঝকঝকে উজ্জ্বল দিনে, ঘোড়ার খুরের শব্দ, গির্জার ঘণ্টা ধ্বনি, প্রচুর টুরিস্টের ছুটির মেজাজে চলার ছন্দ – সব মিলে মিশে সেলজবার্গ ক্যাথিড্রালের সামনের চত্বরটি রীতিমত জমজমাটই বলা যায়। সেলজবার্গ শহরে এসে সতেরো শতাব্দীর বারোক স্টাইলে তৈরি এই ঐতিহাসিক রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রালের সামনে টুরিস্টদের উপস্থিত হতেই হয়। এই ক্যাথিড্রালকে ঘিরেই যেন এই শহরের হৃদয় স্পন্দিত হয়। সেলজবার্গ শহরের ইতিহাসকে বহু সযত্নে যেন ধরে রেখেছে এই ক্যাথিড্রালটি।
ঐতিহাসিক বিশাল এই ক্যাথিড্রালের পাথুরে প্রেক্ষাপটে সারি বাঁধা ঘোড়ার গাড়ি, তার চালক অতি আদিম এক ছবি তৈরি করে – মনে হয়, যেন সত্যিই বোধহয় টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে গেছি বহু যুগ। অতীতের সময়কে, ইতিহাসকে ধরে রাখার এক সচেতন প্রচেষ্টা, আর যার টানেই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসে সেলজবার্গ শহরে – দেখে নিতে চায় এই শহরের বুকে আধুনিক ও অতীত সময়ের সহাবস্থানকে। অনুভব করে নিতে চায় এই শহরের ঐতিহাসিক ছন্দকে।
এই ক্যাথিড্রালেই অষ্ট্রিয়ার বিখ্যাত সুরকার মোজার্টের ব্যাপ্টিজম হয়েছিল, তাই হয়তো পৃথিবীর টুরিস্টদের কাছে এই ক্যাথিড্রাল আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, বলা হয় – বিশাল আকারের ছবির মতো এই ক্যাথিড্রাল অষ্ট্রিয়ান আল্পসের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে সুন্দর ও বিশাল ক্যাথিড্রাল। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি ক্যাথিড্রালেরই শতাব্দী প্রাচীন, নানা সময়ের বহু নিজস্ব ইতিহাস থাকে, ঐতিহাসিক বহু উত্থান পতন, যুদ্ধ বিগ্রহের সাক্ষী বয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইউরোপের ক্যাথিড্রাল গুলো – আর সেলজবার্গের এই ক্যাথিড্রালের বুকেও জমে আছে বহু ঐতিহাসিক নীরবতা, স্তব্ধতা, উদাসীনতা।
আর সেই জন্যেই হয়তো বিশাল এই ক্যাথিড্রালের সামনে পৌঁছে নিজেকে অনেক অনেক ক্ষুদ্র মনে হয়, মনে হয় যুগ যুগ ধরে তিল তিল করে যা সঞ্চিত হয়েছে এই ক্যাথিড্রালের গায়ে গায়ে তার কাছে মানুষের একটি জীবন খুবই নগণ্য, খুবই সাধারণ, তুচ্ছ। কিন্তু, চলমান জীবনের আবেদন, পথের টান এতোই প্রভাবশালী, এতোই আবেদনময় যে মনের এই ক্ষণিক দার্শনিকতা ভোরের শিশির বিন্দু হয়েই রয়ে যায়। পথ খুঁজি জীবনের পথে আরও এগিয়ে যাওয়ার, জীবন যদি অতীব সাধারণই হয় তবে জীবনের চলার পথের মন্ত্রই হোক – চরৈবেতি, চরৈবেতি। আর সেটাই হয়তো মানুষের এক মুখী জীবনের নিয়তি – এক চলমান স্রোতের ভবিষ্যৎ।