সাদা কালো টাইলস বাঁধানো অসম্ভব পরিষ্কার রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে পর্তুগালের ছোট্ট শহর কেসকেসকে অতি সহজে দেখে নেওয়া যায়। আসলে অ্যাটল্যান্টিকের তীরে পর্তুগালের এই ছোট্ট শহর জেলেদের শহর ছিল, অতীতে এই শহরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকাই ছিল মাছ ধরা।
অবশ্য আজও এখানের সমুদ্র তীরে বসে অনেকে মাছ ধরে, বা সমুদ্রের বুকে দূরে দেখা যায় মাছ ধরার নৌকো। কিন্তু, যখন থেকে পর্তুগালের রাজবংশের গরমের ছুটি কাটানোর জায়গা হল এই শহর, সমুদ্রের তীর – ধীরে ধীরে এই শহর পর্তুগালের বিলাস বহুল রিসোর্ট শহরে পরিণত হল। এই শহরে শুরু হল ট্যুরিজম। আজ পর্তুগালের বিলাস ভ্রমণের আরেক নাম এই শহর। লিসবনের খুব কাছেই এই ছোট্ট শহর। লিসবনে এসে তাই, লিসবন থেকে ট্রেনে মাত্র চল্লিশ মিনিটের দূরত্বের এই শহরের হাতছানিকে প্রায় কেউই এড়াতে পারে না, গরমের সময় তাই প্রচুর টুরিস্টের সমাগম হয় এই ছোট্ট শহরে।
ছোট্ট শহর, অথচ মিউজিয়াম, চার্চ, পার্ক, প্রচুর রিসোর্ট, প্রচুর রেস্টুরেন্ট, স্যুভেনিরের দোকান – সব নিয়ে রীতিমত এক টুরিস্ট প্যাকেজ এই শহর। সবই আছে অথচ প্রকৃতির খুব কাছাকাছি, গোছানো, ছিমছাম এই শহরের জীবন যাত্রা। অহেতুক ভিড়, বা যান বাহনের আওয়াজ নেই, জুনের মাঝামাঝি সময়ে বেশ এক মনোরম শান্ত পরিবেশের মাধুর্য এই শহরকে জড়িয়ে আছে। জুন মাসটা এখানে বোধহয় ঠিক টুরিস্ট সিজন নয়।
এই শহরের জীবন যাত্রা অনেকটাই টুরিস্ট কেন্দ্রিক। যাইহোক, ছোট্ট এই শহরকে দেখতে অবশ্যই হেঁটে হেঁটেই শহরের অলি গলি ঘুরে দেখতে হয় – বেশ সকালেই চলে এসেছিলাম এই শহরে, তাই দেখতে পাই, রাস্তার পাশে দোকানিরা ধীরে ধীরে নিজেদের পসরা সাজিয়ে রাখছে – দোকানের সামনে স্যুভেনির থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের দরকারি জিনিস সবই সাজানো হয়ে যায় অতি পেশাদারী দক্ষতায়। জীবন যাপনের অতি সাধারণ প্রক্রিয়া, অথচ অচেনা জায়গার অচেনা জিনিসের প্রতি যে কোন টুরিস্টই এক তীব্র আকর্ষণ বোধ করে। আবার এদিকে আমাদের ইউরোপ ভ্রমণের অলিখিত নিয়মের মধ্যে পড়ে – স্যুভেনির দেখে দেখে অযথা সময় নষ্ট এক্কেবারেই নয়। তাই সমস্ত আদিম আকর্ষণ উপেক্ষা করে এগিয়ে যাই।
সোনালি সমুদ্র তট, উজ্জ্বল নীল দিন, উদার সমুদ্র, ছবির মতো সুন্দর বাড়ি, কোথাও বা পাথরের বুকে নীল সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ের আছড়ে পড়া – সব মিলিয়ে মনে হয় এখানেই বোধহয় সমস্ত স্বপ্নরা সত্যি হয়, রূপকথারা সব বাস্তব হয়ে যায়, কেমন এক ঘোর লাগে মনে, ভালো লাগার আবেশে জুড়িয়ে যায় মন।