এস্টোরিলে এসে (Estoril, Portugal)

অ্যাটল্যান্টিক তীরে কেস্কেস ও এস্টোরিল – পর্তুগালের অপূর্ব সুন্দর ছোট্ট দুই সমুদ্র শহর, টুরিস্টরা যারা লিসবন বেড়াতে আসে, এই দুই শহরের আবেদন কিছুতেই এড়াতে পারে না। এস্টোরিল রেল ষ্টেশনটিও ছোট্ট, শান্ত, সুন্দর – কখনো কখনো ট্রেনে যাত্রার সময় কোন এক ছোট্ট একাকী ষ্টেশন দেখলে কখনো মনে হয় নেমে যাই, দেখি কি আছে এই ছোট্ট ষ্টেশনের ওপারে, তেমনি ছোট্ট – অথচ তীব্র এক আবেদন আছে এই এস্টোরিল রেল ষ্টেশনের। ট্রেনে কেস্কেস যাওয়ার সময়ই এখান থেকেই মাঝে মাঝে গাছ পালার ভেতর থেকে নীল সমুদ্র উঁকি দিয়েছিল, তাই পরের ষ্টেশন কেস্কেসে নেমে গিয়ে তখনই ঠিক করেই নিয়েছিলাম এস্টোরিল শহরটাকেও একবার দেখে যাবো।

কেস্কেস থেকে এস্টোরিল সমুদ্রের পাশে পাশে এক সুন্দর বাঁধানো হাঁটা রাস্তা দিয়ে যুক্ত, যেন দুই শহর কর্তৃপক্ষ টুরিস্টদের মনের কথা বুঝেই এই রাস্তা তৈরি করেছে। জুনের উজ্জ্বল দিনে নীল সবুজ সমুদ্র, সোনালি বালুর সমুদ্র তট, অপূর্ব দৃশ্য পট, সুন্দর প্রাচীন বাড়ি গুলোকে দু’পাশে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে এস্টোরিল পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না – সারা পথে সমুদ্র এক বারও সঙ্গ দিতে ভোলে নি। ছুটি কাটাতে আসা মানুষদের রোদ্র স্নান, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা তো এখানের এক অতি স্বাভাবিক দৃশ্য।

কেস্কেসের তুলনায় এস্টোরিল শহরটি যেন একটু বড়। অসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, সাজানো শহরটি। ক্যাসিনো এস্টোরিল বিশাল চত্বরের সামনে প্রচুর রেস্টুরেন্টে বসে সেরে নেওয়া যায় শেষ দুপুরের খাওয়া দাওয়া। পর্তুগালের খাওয়া দাওয়ার মধ্যে অনেকটাই ভারতীয়ত্ব পাওয়া যায়, আর পর্তুগীজ রেস্টুরেন্টে সাধারণত খুব বেশী পরিমাণে খাদ্য পরিবেশন করে – পরিশ্রমী পর্তুগীজরা নাকি খেতে ভালোবাসে। যাইহোক, গাছের ছায়ায় খোলা রেস্টুরেন্টে বসে শেষ দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার এই শহরটিকে দেখে নিতে হাঁটা শুরু হল।

নতুন জায়গায় যা দেখি সবই যে নতুন, সবই ভালো লাগে। ইউরোপের প্রায় সমস্ত শহরের মধ্যেই এক ইতিহাস জড়িয়ে থাকে। পর্তুগালের আবিষ্কারের যুগে সমুদ্র তীরের এই শহরটির খুবই গুরুত্ব পূর্ণ অবদান ছিল। আবহাওয়া, তাপমাত্রা, মনোরম পরিবেশের জন্যে এই শহরে বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের বসবাস ছিল, নানা জাতির মানুষ মিলেমিশেই বসবাস করতো, কিন্তু রিকোনকুয়েস্টার সময় এই জায়গা সম্পূর্ণ ক্রিস্টান অধীনে চলে আসে। আবার, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে এই শহর নানা দেশের প্রায় শুধুই স্পাই ও রাজনৈতিক কূটনীতিবিদদের গোপন ঘাঁটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে, অতীতে যাই হোক না কেন, এখন আধুনিক এস্টোরিল টুরিস্টদের কাছে বিলাস বহুল ছুটি কাটানোর এক নতুন ঠিকানা।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Southern-Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s